Sri Sri Ram Thakur
শুক্রবার, ২৮ জুন, ২০২৪
Translated from "Sri Guru Sri Sri Ram Thakurb By Sri Rohini Kumar Mazumdar
Respected Ramdas Pal had a house in Kashi. He was engaged in the ghee business in Khurda, Chapra district. He had achieved considerable success in this business and had constructed a two-storied house in the Awadhgarbi area of Kashi. Suddenly, he felt a surge of renunciation. Gradually, his attachment to worldly affairs diminished, and he spent his days and nights in rigorous prayer and meditation. He ate only once a day, cooking for himself. Eventually, he abandoned the ghee business and went to Haridwar seeking refuge under the highly revered Swami Bholananda Giri Maharaj.
Maharaj, in his kindness, accepted Ramdas Babu. When Ramdas Babu asked what he should do next, Giri Maharaj instructed him to resume his ghee business. In response, Ramdas Babu expressed that he neither had the mind for business nor the financial resources. Giri Maharaj then ordered five thousand rupees to be given to Ramdas Babu from the ashram fund. With this money, he returned to Khurda and restarted his ghee business. However, his focus remained entirely on his spiritual practices, claiming that during pranayama, he could rise a hand's breadth above the ground. Neglecting his business, he lost all his capital within two years and returned to Giri Maharaj in Haridwar, explaining everything.
Giri Maharaj, upon hearing this, said, "What does it matter? Take another ten thousand rupees and carry on the business comfortably." However, Ramdas Babu refused to take more money, stating that he had already squandered the previous amount and would not take any more or continue the ghee business. This disobedience greatly angered Maharaj, who ordered Ramdas Babu to return the five thousand rupees he had previously taken. Ramdas Babu found himself in a dire situation with no means to repay the debt. Ultimately, he sold his house in Kashi to clear the debt.
After this, Ramdas Babu roamed the streets, not returning home and sleeping on the roads at night, speaking to no one. This greatly distressed his wife, who was left in a difficult situation with a marriageable daughter and a son studying at Kashi Engineering College. Unable to cope, she rented a room on the ground floor of their sold house. In this sea of troubles, Ramdas Babu's wife eventually sought refuge at the feet of Sri Sri Ram Thakur, narrating her plight and pleading for a change in her husband's disposition. As she spoke to Sri Sri Ram Thakur, tears flowed incessantly from her eyes.
Sri Sri Ram Thakur said, "Your husband does not come to me. What can I do if he does not come to me?" I was present with Sri Sri Ram Thakur at that time. Hearing everything, I felt very sorry and, losing respect for Giri Maharaj, uttered a few harsh words about him. Sri Sri Ram Thakur, extremely displeased, said, "One should never criticize a great person. They never speak untruths." Feeling very ashamed, I remained silent.
Two days later, I returned to Muzaffarpur from Kashi, with no further news of Ramdas Babu. About fifteen days later, I received a letter from Sri Sri Ram Thakur from Kashi stating, "Ramdas Babu is coming to stay with you in Muzaffarpur for a month. Please ensure he is well taken care of." A few days later, around ten in the morning, Ramdas Babu arrived at my house with a bedroll and a suitcase, and prostrated before me. I had never seen him before. When I asked for his introduction, he said, "My name is Ramdas Pal. Sri Sri Ram Thakur has sent me to you." I showed him a room and made arrangements for his stay.
We bathed and sat down for lunch around one in the afternoon. I was unaware that Ramdas Babu was a vegetarian. We rarely ate vegetarian dishes. That day, too, all the dishes were non-vegetarian. My wife was serving the food. Seeing all the dishes, Ramdas Babu said, "Brother, I eat only vegetarian food." I replied, "In that case, you shouldn't have come here." Feeling very embarrassed and distressed, I added, "I eat non-vegetarian food myself, so I urge you to do the same." Without saying another word, he started eating.
During his stay in Muzaffarpur, he ate fish and meat every day. Ramdas Babu stayed with me constantly. He accompanied me to school, sat quietly in a chair while I taught classes, and even went with me to the Orient Club in the evening. While I engaged in various games at the club, Ramdas Babu sat silently in a corner, not speaking to anyone.
One evening, on our way to the club, Ramdas Babu asked, "Brother, when do you practice meditation and prayer?" I replied, "I have never learned or practiced any meditation or prayer." He did not believe me, insisting, "You must be practicing at night." Despite my repeated denials, he did not believe me. Eventually, I told him, "From today, you will sleep with me on the same bed." After four or five days, Ramdas Babu said, "I still don't understand you." I said, "I always think of Sri Sri Ram Thakur as my meditation and knowledge. I wake up in the morning, bow to him, and then engage in my work, considering myself an instrument and him the player. I do not hold any specific thoughts—this is all I know." Ramdas Babu then asked, "What do you suggest I do?" I replied, "Start the ghee business again. If you remain idle with a healthy and strong body, who will take care of your family? You have a marriageable daughter and a son whose education needs to be arranged. Considering their situation, you should resume the ghee business. However, I wonder how you will restart the business without any capital." Ramdas Babu said, "The people of Khurda like me very much. I am confident they will help me financially and in every other way."
After a month, Sri Sri Ram Thakur returned from Kashi. We both paid our respects to him. Sri Sri Ram Thakur asked Ramdas Babu, "Did Rohini Babu say anything to you?" Ramdas Babu replied, "He advised me to go back to Khurda and resume the ghee business." Sri Sri Ram Thakur said, "You should return to Khurda." A few days later, Ramdas Babu left for Khurda. Sri Sri Ram Thakur did not say anything to me, but I felt that perhaps he had made me instruct Ramdas Babu to resume the ghee business as a consequence of my criticism of Giri Maharaj. I realized that Giri Maharaj had not spoken falsely. His words, "You must run the ghee business," and Sri Sri Ram Thakur's admonition, "One should never criticize great persons; they never speak untruths," kept ringing in my mind.
About six months later, I saw 'Ramdas Mark' ghee being sold in the market.
শনিবার, ২৮ মে, ২০১৬
মুজঃফরপুরে খুব ভালো অমৃতি পাওয়া যাইত। বাড়ির নিকটেই একটি মিষ্টির দোকান ছিল। প্রায়ই সেখান হইতে গরম গরম অমৃতি আনা হইত। এক দিন বর্ষাকালের দ্বিপ্রহরে প্রবল বেগে বৃষ্টি পড়িতেছিল। এত জোরে বৃষ্টি হইতেছিল যে, ঘরের বাহিরে যাওয়া একেবারেই অসম্ভব। ছাতি লইয়া গেলেও রক্ষা নাই, ভিজিতেই হইবে। বেলা প্রায় তিনটা বাজিয়া গেল। বৃষ্টি থামার কোন লক্ষণ নাই। আমরা সবাই ঠাকুরকে লইয়া নানা বিষয়ে কথা বলিতেছি। হঠাত আমি বলিলাম, "এখন যদি গরম গরম অমৃতি পাওয়া যাইত তবে কেমন মজা হইত!" একটু পরে ঠাকুর খড়ম পায়ে দিয়া নিচে নামিয়া গেলেন। ভাবিলাম, ঠাকুর পস্রাব করিতে যাইতেছেন। উপরে যে পস্রাবাগারটি ছিল সে ঘরটিতে মাথা নিচু করিয়া যাইতে হয়। ঠাকুর মাথা নিচু করিয়া কথাও যান না। তাই এই ঘরে প্রবেশ করার সময় তাঁহার কপালে ধাক্কা লাগিয়া ফুলিয়া যায়। নিচের পস্রাবাগারটি বড়, তাই উপরের ঘরটি তালা বন্ধ করিয়া রাখিয়াছি। নীচের ঘরের দরজা বড়, মাথায় আঘাত লাগার সম্ভাবনা নাই। তাই তিনি সর্ব্বদা মলমূত্র ত্যাগ করিতে নীচে যাইতেন। ঠাকুরের খড়মের শব্দে কিন্তু বুঝিলাম তিনি সদর দরজার নিকটে গেলেন এবং ততক্ষনাত ফিরিলেন। উপরে যখন উঠিলেন, দেখিলাম তাঁহার হাতে একটি চুপড়ি বোঝাই গরম অমৃতি রহিয়াছে। অমৃতি দেখিয়া মনে মনে খুব খুশি হইয়াছি। আমি জিজ্ঞাসা করিলাম, "এই অমৃতি কোথায় পাইলেন ? আপনি বাহিরে যান নাই, আর বাহিরে যাওয়ার তো উপায় নাই।" ঠাকুর বলিলেন, "একজন ভক্ত দিয়া গেল। কেন? সে ডাক দিল আপনারা শোনেন নাই?" আমি বলিলাম, "কোন ডাকই ত শুনি নাই।" ঠাকুর বলিলেন, "কান থাকলে তো শুনবেন।" তখন প্রবল বেগে বৃষ্টি পড়িতেছে। আমাদের আনন্দ আর দেখে কে? সবাই খুব আনন্দ করিয়া অমৃতি প্রসাদ পাইলাম। ঠাকুরকে অমৃতি গ্রহনের জন্য প্রার্থনা করিলাম। কিন্তু তিনি স্বীকৃত হইলেন না। এই ভাবে তিনি আমাদের রাবড়ি ও বালুসাইও খাওয়াইছেন।
শ্রীগুরু শ্রীশ্রী রামঠাকুর
শ্রী রোহিনী কুমার মজুমদার
পৃষ্ঠা: ৪৮
বুধবার, ১৮ মে, ২০১৬
গুরু কর্তা। দেবদেবী তাঁরই সহচর ও সহচরী।
অতুলবাবুর স্ত্রীর মনে মাঝে মাঝেই একটি প্রশ্ন প্রকট হয়ে উঠে। একদিন ঠাকুরকেই তা জিজ্ঞেস করে বসলেন, আপনার ভক্ত তো আপনার শ্রীচরণে সব দেবদেবীর পূজা করেন, তাহলে দেবদেবীর এতগুলি ফটো ঘরে রাখার দরকার কি?
সঙ্গে সঙ্গে ঠাকুর বলে উঠলেন, ক্যান আপনি কি একলা থাকতে ভালবাসেন? সেই রকম আমিও একলা থাকতে ভালবাসি না। ঠাকুর দেবতা কাহাকেও বিসর্জন দিতে নাই, আবার আবাহন কইরা আনিতে নাই। যে দেবতার আসার ইচ্ছা হয় সে নিজেই আসে।
ঘরের কর্তাকে রেখে আর সবাইকে কি তাড়িয়ে দেওয়া যায়? গুরু কর্তা। দেবদেবী তাঁরই সহচর ও সহচরী। রাস্তার লোক ডেকে তার কেউ সেবা করে না। কিন্তু কোন অতিথি এলে তাকে দিতে হয় যথার্থ মর্যাদা। দেবদেবীর বেলাও একই কথা। তাই তো ঠাকুর দিলেন অপূর্ব সমাধান - কাউকে ডেকে আনবেন না। কিন্তু কেউ এলে তাকে বিসর্জন দেওয়া যায় না।
পুরুষোত্তম শ্রীশ্রী রামঠাকুর
শ্রী মৃনাল কান্তি দাসগুপ্ত পৃষ্ঠা: ২১৭
পশ্চিম জার্মানীতে মোটর গাড়ির দুর্ঘটনা হইতে রক্ষা
পরম ভক্ত ঋষি অতুল চন্দ্র মুখোপাধ্যায় মহাশয়ের মেয়ে উষারানি
গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর ছেলে সুব্রত গঙ্গোপাধ্যায় পশ্চিম জার্মানিতে বাস
করিতেন। জার্মানিতেই কর্মরত এবং বিবাহ। তাহাদের একটি মেয়ে। তাঁর নাম মনিকা।
যখন তাহার বয়স সাত কি আট, তখন স্কুলে পড়ে। একদিন স্কুল হইতে ফিরিবার সময়
ফুট পাত রাস্তা ধরিয়া ঘরে যাইতেছিল, এমন সময় তাহার বন্ধু রাস্তার উল্টা
দিকের ফুট পাত দিয়া যাইতেছিল। মনিকাকে দেখিয়ে সে আওয়াজ দিল। মনিকা ডাক
শুনিয়া রাস্তায় নামিয়া পড়িল, ততক্ষনাত একটা মোটর গাড়ি আসিয়া ধাক্কা
মারিল।.ধাক্কার ফলে মোটর গাড়ির মোটর গাড়ি নিচে না পড়িয়া, ইঞ্জিনের মাথায় যে
ঢাকা আবরণ তাহার উপর পড়িয়া বা উঠিয়া ছিটকাইয়া উল্টো ফুট পাতের দিকে
পড়িয়াছে। পুলিশ তাহা দেখিয়া সাইরেন বাজাইয়া সমস্ত গাড়ি থামাইয়া মনিকাকে
তুলিয়া হাসপাতালে নিয়া ভর্ত্তি করিয়াদেয়। সে অজ্ঞান হইয়া পড়িয়াছে।
হাসপাতালের ডাক্তার নানা ভাবে পরীক্ষা করিয়া দেখিল। সে অজ্ঞান ছাড়া আর কিছু
হয় নাই। শরীরের বাহ্যিক ও ভিতর-গত-সবই ঠিক ছিল। এই দুর্ঘটনায় দেখা গেল
মোটর গাড়ির উপরের ইঞ্জিন কভারটির এক দিকে গর্ত হইয়া গিয়াছে। পরদিন সকালে
জার্মান পত্রিকায় মিরাকেল ঘটনা বলিয়া এই দুর্ঘটনার খবর বাহির হইল।
মনিকা যখন তাহার শিশু অবস্থা। তখন সে খুবই অসুস্থ থাকিত। তাহার বাবা সুব্রত গঙ্গোপাধ্যায় শ্রীশ্রী ঠাকুরের পরম ভক্ত। ঠাকুরের ফটো তাহার অফিস ডায়েরীতে রাখিয়াছিল। অফিসে যাওয়ার পূর্বে ডায়েরী খুলিয়া প্রনাম করিয়া যাইত। তাহার স্ত্রী তাহা সর্বদাই দেখিতে পাইত।
মেয়ের অসুস্থতার জন্য তাহাদের উভয়ের মন খুব খারাপ থাকিত। এক রাত্রিতে সুব্রতের স্ত্রী স্বপ্নে দেখেন আমাদের ঠাকুরকে এবং বলিতেছেন কোন ভয় নাই। ডাক্তার দেখাও মেয়ে ভালো হইয়া যাইবে। ডাক্তারের নাম ঠাকুর বলিয়া দিয়াছেন। পরদিন ঐ অভয় বাণী-অনুসারে ডাক্তারের নিকট নিয়া যায়। কিছুদিন চিকিত্সার পর মনিকা সম্পূর্ণ রূপে সুস্থ হইয়া যায়। ইহার পর সুব্রত বাবুর স্ত্রী শ্রীশ্রী ঠাকুরের ফটোর সামনে টফি লজেন্স ও ফুল দিয়া পূজা করিত।
শ্রদ্ধেয় অতুল চন্দ্র মুখোপাধ্যায় ও তাঁহার পরিবার আশ্রিত বর্গের মধ্যে অন্যতম। অতুল চন্দ্র মুখোপাধ্যায় মহাশয় নিজে যেমন ধর্মপ্রাণ ও গুরুদেবের প্রতি অত্যন্ত আসক্ত ছিলেন, তেমনি তাঁহার স্ত্রী পুত্র কন্যাসহ পরিবারের সকলেই শ্রীশ্রী ঠাকুরের প্রতি অনুরক্ত ছিলেন।
শ্রীশ্রী ঠাকুর তাহাদের এত ভালবাসিতেন এবং এই পরিবারের সঙ্গে এত একাত্ম হইয়া গিয়াছিলেন যে যখনই তাঁহার ইচ্ছা হইত তখনই অতুল চন্দ্র মুখোপাধ্যায় মহাশয়ের বাড়িতে আসিতেন এবং অন্ত্যর্যামী ঠাকুর তাহাদের মনোভাব বুঝিতে পারিয়াছেন বলেই সবাইকে অপার স্নেহের বন্ধনে আপন করিয়া নিয়াছেন। বহু বত্সর কাল শ্রীশ্রী ঠাকুরের ঘনিষ্ট সান্নিধ্যে এই পরিবার ছিল। যখনই তাহাদের সুখ দুঃখের মধ্যে তাঁহাকে স্মরণ করিয়াছেন অন্ত্যর্যামি ঠাকুর উপস্থিত হইয়াছেন।
দুর্গাপূজা, বাসন্তী পূজা, জগদ্ধাত্রী পূজা, কালী পূজা, শিব পূজা, রাম নবমী, ফুল দোল, রাস পূর্নিমা, রথ যাত্রা, শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমী, লক্ষী পূজা, সরস্বতী পূজা, ভাইফোটা ইত্যাদি চূড়ামনি যোগের নানা ক্রিয়া শ্রীশ্রী ঠাকুরের নির্দ্দেশে সম্পন্ন হইয়া থাকিত অতুল চন্দ্র মহাশয়ের বাড়িতে এবং অধিকাংশ পূজা পার্বনে ঠাকুর স্বয়ং উপস্থিত থাকিয়া ক্রিয়াদি সম্পন্ন করিতেন।
অতুলবাবুর মৃত্যুর পর তাঁহার পরিবার অত্যন্ত অসহায় বোধ করিত। অতুল বাবুর মেয়ে উষারানির বিবাহের জন্য সকলে খুব চিন্তায় ছিল। কিন্তু দয়াল ঠাকুর পিতার মত উষা দেবীর বিবাহের জন্য নানান জায়গায় চিঠি পত্রাদি লিখিয়া সুপাত্র নির্বাচন করিয়া তাহার বিবাহের কার্য্য সম্পন্ন করিয়াছেন ১৯২৮ সালের (বৈশাখ) ইং মে মাসে শ্রী যুক্ত সুরেশ্বর গঙ্গোপাধ্যায় মহাশয়ের সহিত। ১৯২৭ সালের অক্টোবর মাসে অতুল চন্দ্র মুখোপাধ্যায় মহাশয় দেহ ত্যাগ করেন।
শ্রীশ্রী ঠাকুর রাম চন্দ্র দেবের স্মরণে (নামামৃত)
শ্রী সুবোধ রঞ্জন শর্ম্মা (এম.এ)
মনিকা যখন তাহার শিশু অবস্থা। তখন সে খুবই অসুস্থ থাকিত। তাহার বাবা সুব্রত গঙ্গোপাধ্যায় শ্রীশ্রী ঠাকুরের পরম ভক্ত। ঠাকুরের ফটো তাহার অফিস ডায়েরীতে রাখিয়াছিল। অফিসে যাওয়ার পূর্বে ডায়েরী খুলিয়া প্রনাম করিয়া যাইত। তাহার স্ত্রী তাহা সর্বদাই দেখিতে পাইত।
মেয়ের অসুস্থতার জন্য তাহাদের উভয়ের মন খুব খারাপ থাকিত। এক রাত্রিতে সুব্রতের স্ত্রী স্বপ্নে দেখেন আমাদের ঠাকুরকে এবং বলিতেছেন কোন ভয় নাই। ডাক্তার দেখাও মেয়ে ভালো হইয়া যাইবে। ডাক্তারের নাম ঠাকুর বলিয়া দিয়াছেন। পরদিন ঐ অভয় বাণী-অনুসারে ডাক্তারের নিকট নিয়া যায়। কিছুদিন চিকিত্সার পর মনিকা সম্পূর্ণ রূপে সুস্থ হইয়া যায়। ইহার পর সুব্রত বাবুর স্ত্রী শ্রীশ্রী ঠাকুরের ফটোর সামনে টফি লজেন্স ও ফুল দিয়া পূজা করিত।
শ্রদ্ধেয় অতুল চন্দ্র মুখোপাধ্যায় ও তাঁহার পরিবার আশ্রিত বর্গের মধ্যে অন্যতম। অতুল চন্দ্র মুখোপাধ্যায় মহাশয় নিজে যেমন ধর্মপ্রাণ ও গুরুদেবের প্রতি অত্যন্ত আসক্ত ছিলেন, তেমনি তাঁহার স্ত্রী পুত্র কন্যাসহ পরিবারের সকলেই শ্রীশ্রী ঠাকুরের প্রতি অনুরক্ত ছিলেন।
শ্রীশ্রী ঠাকুর তাহাদের এত ভালবাসিতেন এবং এই পরিবারের সঙ্গে এত একাত্ম হইয়া গিয়াছিলেন যে যখনই তাঁহার ইচ্ছা হইত তখনই অতুল চন্দ্র মুখোপাধ্যায় মহাশয়ের বাড়িতে আসিতেন এবং অন্ত্যর্যামী ঠাকুর তাহাদের মনোভাব বুঝিতে পারিয়াছেন বলেই সবাইকে অপার স্নেহের বন্ধনে আপন করিয়া নিয়াছেন। বহু বত্সর কাল শ্রীশ্রী ঠাকুরের ঘনিষ্ট সান্নিধ্যে এই পরিবার ছিল। যখনই তাহাদের সুখ দুঃখের মধ্যে তাঁহাকে স্মরণ করিয়াছেন অন্ত্যর্যামি ঠাকুর উপস্থিত হইয়াছেন।
দুর্গাপূজা, বাসন্তী পূজা, জগদ্ধাত্রী পূজা, কালী পূজা, শিব পূজা, রাম নবমী, ফুল দোল, রাস পূর্নিমা, রথ যাত্রা, শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমী, লক্ষী পূজা, সরস্বতী পূজা, ভাইফোটা ইত্যাদি চূড়ামনি যোগের নানা ক্রিয়া শ্রীশ্রী ঠাকুরের নির্দ্দেশে সম্পন্ন হইয়া থাকিত অতুল চন্দ্র মহাশয়ের বাড়িতে এবং অধিকাংশ পূজা পার্বনে ঠাকুর স্বয়ং উপস্থিত থাকিয়া ক্রিয়াদি সম্পন্ন করিতেন।
অতুলবাবুর মৃত্যুর পর তাঁহার পরিবার অত্যন্ত অসহায় বোধ করিত। অতুল বাবুর মেয়ে উষারানির বিবাহের জন্য সকলে খুব চিন্তায় ছিল। কিন্তু দয়াল ঠাকুর পিতার মত উষা দেবীর বিবাহের জন্য নানান জায়গায় চিঠি পত্রাদি লিখিয়া সুপাত্র নির্বাচন করিয়া তাহার বিবাহের কার্য্য সম্পন্ন করিয়াছেন ১৯২৮ সালের (বৈশাখ) ইং মে মাসে শ্রী যুক্ত সুরেশ্বর গঙ্গোপাধ্যায় মহাশয়ের সহিত। ১৯২৭ সালের অক্টোবর মাসে অতুল চন্দ্র মুখোপাধ্যায় মহাশয় দেহ ত্যাগ করেন।
শ্রীশ্রী ঠাকুর রাম চন্দ্র দেবের স্মরণে (নামামৃত)
শ্রী সুবোধ রঞ্জন শর্ম্মা (এম.এ)
শুক্রবার, ১৪ আগস্ট, ২০১৫
গুরু কৃপা- একটি কাহিনী
[মাইজদী স্থিত জন্মোত্সব মন্দির থেকে প্রকাশিত শ্রীঠাকুরের ১২৫ তম শুভ আবির্ভাব তিথি স্মরণে এই কাহিনীটি মুদ্রিত হয়েছিল, হুবহু তাই প্রকাশ করা হলো।]
১৯৮১ সন। যাদবপুর কৈবল্যধাম প্রাঙ্গন।পশ্চিমবঙ্গ। নাম গ্রহণ অনুষ্ঠান। ভক্তবৃন্দের প্রচুর ভিড়। একে একে নাম গ্রহণ করে সানন্দে ভক্তবৃন্দ ঘরে ফিরে গেল। কিন্তু সর্বালঙ্কারে বিভূষিত চারুলোচনা এক মহিলা মন্দিরের এক কোনে প্রথম থেকেই অপেক্ষা করছিলেন। সবাই ঘরে ফিরল কিন্তু মহিলাটির মধ্যে সে তাগিদও অনুভূত হল না। মহারাজ (চতুর্থ মোহন্ত মহারাজ শ্রীমত ভবতোষ বন্দ্যোপাধ্যায়) ব্যাপারটি লক্ষ্য করেছিলেন। আসন ত্যাগ করে মহারাজ উঠলেন স্বস্থানে ফিরে যাওয়ার জন্য। এমন সময় মহিলা এসে বললেন- বাবা, আমি আপনার কাছে কিছু কথা বলবো। শুনতে হবে। মহারাজ অভয় দিলেন। মহিলা তাঁর নিবেদন করলেন:
পাশাপাশি দু'টি গ্রাম। মাঝে ছোট একটি নদী। ওপারের গ্রামে রামসাধু এসেছেন। খবরটি বাতাসের আগে চারদিকে প্রচারিত হল। আমার শাশুড়ি দীর্ঘ দিন থেকেই ঠাকুরকে দেখা এবং ঠাকুরের কাছ থেকে নাম গ্রহণ করার জন্য আকুল আগ্রহে অপেক্ষা করছিলেন। কিন্তু এবার সে সুযোগ পেয়েও তিনি বুঝি বঞ্চিত হবে। দারিদ্রই একমাত্র প্রতিবন্ধকতা। পরনে ছেঁড়া কাপড়। আর্থিক অসচ্ছ্বলতা। দিন আনে দিন খায়। কিন্তু নাম গ্রহনের চিন্তায় কাজে মন বসে না। প্রতিবেশীরা সবাই ঠাকুর দর্শনে ওপারে যায়। অপসৃয়মান দর্শনার্থী ভক্তদের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে শাশুড়ি চোখের জল ফেলেন। খেয়াপারের পয়সাটি পর্যন্ত তাঁর কাছে নেই।
এক অপরাহ্ন। ঐ নদীর তীর। দর্শনার্থী লোকজন দেখল কৃষ্ণকায় শান্ত সৌম্য এক প্রৌঢ় ব্রাহ্মন এপারের খেয়াঘাটে নামলেন। এগিয়ে চললেন সামনের দিকে। মাঝিকে সবাই জিজ্ঞেস করলো-ব্রাহ্মনটি কে?
মাঝি-শুনেছি রামসাধু।
আর যায় কোথায়! ভক্তবৃন্দ সাধুর পেছনে ছুটলো। সাধু বাবা এলেন আমাদের উঠোনে। আমার শাশুড়িকে ডেকে বললেন- মা, আমি নাম দিতে এসেছি। নাম গ্রহণ করুন। ছিন্নবসনা আমার শাশুড়ি, আটপৌরে পোশাকে দয়াল ঠাকুরের সামনে যেতে ইতস্ততঃ করছিলেন। ঠাকুর ঐ অবস্থাতেই নাম গ্রহণ করার জন্য আহ্বান জানালেন। শাশুড়ি ভক্তিভরে মন্ত্র গ্রহণ করলেন। ঠাকুর ফিরে যাচ্ছিলেন। এমন সময় আমার শাশুড়ি করে বসলেন এক কাণ্ড। তিনি হঠাত করে ঠাকুরের শ্রীচরণ জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বললেন- বাবা, এক বছর আগে আমার তিন বছরের একটি ছেলে মারা গেছে। আমাকে যখন এতই অনুগ্রহ করলেন, আমার সে ছেলেটিকেও আজ আমাকে ফিরিয়ে দিন। ঠাকুর তো অবাক! বলে কি! এ কি করে সম্ভব। কিন্তু কোন কথাতেই শাশুড়ি ঠাকুরের শ্রীচরণ ছেড়ে দিতে রাজি হলেন না। একটি মাত্র শর্ত। আমার ছেলেকে ফিরিয়ে দিন। ঠাকুর ক্ষনিকের জন্য যেন চিন্তা করলেন। তারপর শাশুড়িকে অভয় বাণী দিয়ে সেখানেই ধ্যানস্থ হলেন। দশনার্থী ভক্তবৃন্দ বাড়িময়। কিছুক্ষণ পর ঠাকুর বললেন- মা, অচিরেই তোমার হারানো ছেলে তোমার গর্ভে ফিরে আসবে। ঠাকুর স্বস্থানে ফিরে গেলেন। তিন বছর পর আমার শাশুড়ি হলেন সন্তানসম্ভবা। নির্দিষ্ট সময়ান্তে মায়ের কোল জুড়ে এলো একটি শিশু সন্তান। মুখে যেন তার স্বর্গীয় সুষমা। সেই চেহারা। সেই কান্তি। পার্থক্য কোথাও নেই। পূর্বের মৃত সন্তানই শাশুড়ির ঘর আলোকিত করে এলো।
আমি সেই পুত্রেরই বধূ। আজ আমাদের সব আছে। সব হয়েছে। আশির্বাদ করবেন আমরা যেন ঠাকুরের শ্রীচরণে আশ্রিত থাকি।
ঠাকুর প্রসঙ্গে এই ঘটনাটি আমাদের কাছে প্রকাশ করে মহারাজ বলেন- আমি এমনই দুর্ভাগা যে, মহিলাটির ঠিকানা পর্যন্ত জিজ্ঞেস করতে ভুলে গেছি।
যেই জন মনে প্রাণে ভজে রাম রাম।
ঘরে বসে পায় সে শ্রী কৈবল্যধাম।।
স্মরনিকা
চতুর্থ মহারাজ শ্রীমত ভবতোষ বন্দ্যোপাধ্যায়- এর প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য
পৃষ্ঠা: ৭
চতুর্থ মহারাজ শ্রীমত ভবতোষ বন্দ্যোপাধ্যায়- এর প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য
পৃষ্ঠা: ৭
"ঠাকুর মানুষী তনুকে আশ্রয় করিয়া দ্বারে দ্বারে ঘুরিয়া সত্যযুগ ধর্ম্ম প্রচার করিয়া প্রকট লীলা সংবরণ করিয়া নিকটে নিকটে হৃদয়ে হৃদয়ে প্রতি শ্বাসে প্রশ্বাসে "প্রানরূপে" বিরাজ করিতেছেন, ইহা ধ্রুব সত্য।
এখনও নিত্যলীলা করে গৌর রায়।
কোন কোন ভাগ্যবানে দেখিবারে পায়।। "
চতুর্থ মোহন্ত মহারাজ শ্রীমত ভবতোষ বন্দ্যোপাধ্যায়-এর ডায়েরি থেকে।
এতে সদস্যতা:
পোস্টগুলি (Atom)