সোমবার, ১৩ জুলাই, ২০১৫

একদিন শ্রীবাস অঙ্গনে উত্সবের আয়োজন হয়। ভক্তেরা প্রত্যুষে কির্তন আরম্ভ কইরা রাত্র ১২ টায় কির্তন সমাপন করেন। সেদিন মহাপ্রভু কীর্তনে কখনও হাসি, কখনও কান্না, কখনও উদ্দাম নৃত্যে এতই বিভোর ছিলেন যে ভক্তেরা প্রভুরে প্রসাদ গ্রহণ করতে বলার সুযোগ ও সাহস পান নাই। কির্তনান্তে মহাপ্রভু সুস্থ হইয়া গদাধররে কইলেন - গদাধর আজ তোমরা আমারে মহাপ্রসাদ দেও নাই। আমি ক্ষুধার্ত। আমারে প্রসাদ দেও।
এই কথা শুইনা শ্রীবাস, গদাধরাদি ভক্ত অন্দরমহলে গিয়া দেখেন কিছুমাত্র প্রসাদ নাই। তাঁরা ম্লান বদনে অবনত শিরে মহাপ্রভুর সামনে দন্ডায়মান থাকায় প্রভু জিজ্ঞাসা করলেন - কী হইল, আমারে প্রসাদ দিলা না?
গদাধর সাশ্রুনেত্রে নিবেদন করিল - প্রভু, প্রসাদ বিন্দুমাত্র অবশিষ্ট নাই।
তা শুইনা প্রভু উক্তি করলেন - প্রসাদের শেষ নাই। প্রসাদ কখনও শেষ হয় না। তোমরা যাও। গিয়া যেই যেই পাত্রে যেই যেই জিনিস ছিল সেই সকল পাত্র পরিষ্কার কইরা অন্য একটা পাত্রে সমস্ত জিনিস একত্র কইরা প্রসাদ তৈয়ার কর।
প্রভুর আদেশে ভক্তেরা পুনরায় অন্দরে গিয়া সব পাত্র পরিষ্কার কইরা ঘৃত, দধি, মধু, খই, বাদাম, কিশমিশ, মোনাক্কা, জায়ফল ইত্যাদি সংগ্রহ কইরা আনন্দ ভরে আইসা মহাপ্রভুর সামনে পাত্রটি রাখলেন।
প্রভু দেইখা কইলেন - একী? এইখানে রাখছ কেন? সব জিনিস একসঙ্গে মিলাইয়া প্রসাদ তৈয়ার কইরা সকলেরে দেও, আমারেও দেও।
গদাধর প্রসাদ তৈয়ার কইরা সকলেরে দিল, আমারেও যথেষ্ট পরিমানে প্রসাদ দিল। আমি অতীব ক্ষুধার্ত ছিলাম বইলা পরম তৃপ্তি সহকারে পেট ভইরা প্রসাদ পাইলাম। সেদিন থাকা এই প্রসাদের নাম হইল মালসা ভোগ।
এই বলিয়া ঠাকুর কিছু সময় নীরব থাকিয়া ধীরে ধীরে বলিয়া উঠিলেন - আমিই গৌরাঙ্গ দেব। ঠাকুর তখন সম্পূর্ণ ধ্যানস্থ অবস্থায় অর্ধনিমীলিত চক্ষে বসে আছেন। আশ্রিতরা হাতজোড় করে বসে আছেন।
ঠাকুরের ধ্যানস্থ অবস্থা ভঙ্গ হইলে তিনি বললেন - আপনেরা এখানে বইসা আছেন কেন?
ডাক্তার জে.এম দাসগুপ্ত উত্তরে জানালেন - বাবা আমরা আপনার কথা শুনবার জন্যই বসে আছি।
শ্রীশ্রী ঠাকুর হাসিমুখে বললেন -ভালো, আমার কথা শুইনা করিমউল্লা, সোনাউল্লা হন। বকাউল্লা হইবেন না।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন