শ্রাবন মাস-বর্ষাকাল। অবিরাম মুষলধারে বৃষ্টি পড়িতেছে। রাস্তাঘাট জলে পরিপূর্ণ-জনমানবহীন। ঐদিন প্রাতে মাতাঠাকুরানী বলিয়াছিলেন যে ঘরে চাউল নাই। ভাবলাম হাতে একটিও পয়সা নাই, কোথায় টাকা পাই, কথায়ই বা চাউল পাই, ধারই বা এই মাসের শেষে কে দিবে? তারপর ভাবিতে লাগিলাম 'আমি চিন্তা করি কেন? ঠাকুরের উপর নির্ভর করিয়া থাকি তিনি যাহা হয় ব্যবস্থা করিবেন।' এইভাবে মন স্থির করিতে চেষ্টা করিলাম। এমন সময় কিছুদিন পূর্ব্বেকার একটি ঘটনা মনে পড়িয়া গেল।
ঠাকুর তখন ফেনী কলেজের প্রফেসর শ্রীযুক্ত প্রমথনাথ চক্রবর্তী মহাশয়ের বাসায় আছেন। আমি তথায় সর্ব্বদা ঠাকুরের সঙ্গে আছি। তিন চারদিন বাড়ী যাই না; ভাবিলাম, 'মাতাঠাকুরানী বাজার খরচের কী ব্যবস্থা করিতেছেন একবার গিয়া দেখিয়া আসি।' বাড়ী পৌঁছিবা মাত্রই মা বলিলেন, "বাজার খরচা বাবদ কিছু দিয়া যাস, দুইদিন যাবৎ বাজার করি না।" আমি হাঁ বা না উত্তর না করিয়া সুযোগ বুঝিয়া সরিয়া পরিলাম, কারণ আমার হাতে তখন একটী পয়সাও নাই। প্রমথদাদার বাড়ীতে ফিরিয়া ঠাকুরকে প্রনাম করিলাম। প্রনাম করিতেই আমার দিকে তাকাইয়া ঠাকুর বালিশের তলায় হাত দিলেন ও সেখান হইতে কয়েকটি টাকা বাহির করিয়া আমার হাতে দিয়া বলিলেন, 'যান, মাকে এই টাকা কয়টা দিয়া আসেন।' ঠাকুর যে অন্তর্যামী এবং তাঁহার অজানা যে কিছুই নাই তাহা অনুভব করিতে করিতে আমি বাড়ী যাইয়া মাকে টাকা দিয়া আসিলাম।
উক্ত ঘটনা মনে পড়িতেই চাউলের চিন্তা কিছুটা প্রশমিত হইল। হঠাত বাহির হইতে একটা শব্দ আসিল, 'বাবু, চাউল রাখবেন।' বাহিরে তখনও অবিরাম ধারায় বৃষ্টি পড়িতেছে। ভাবিলাম, 'ভুল শুনিতেছি না তো।'; কিন্তু আবার সেই ডাক- 'বাবু, চাউল রাখবেন?'- কৌতূহল পরবশ হইয়া উত্তর করিলাম, 'কে? বাড়ীর ভিতরে এস।' - চাউলের ভাঁড় লইয়া বাড়ীর ভিতরে আসিল জনৈক বৃদ্ধ- বয়স অনুমান ৬০/৬৫ বত্সর হইবে। আমি তাহাকে বলিলাম, 'আমার আতপ চাউলের প্রয়োজন।' সে বলিল, 'আতপ চাউলই আনিয়াছি।' সঙ্গে সঙ্গে সে মোড়ানো কলাপাতা খুলিয়া ফেলিল। বৃদ্ধকে বলিলাম, চাউল আমার পছন্দ হইয়াছে- এখন মাসের শেষ, আমার হাতে টাকা নাই। ইংরাজী মাসের দুই, তিন তারিখের আগে টাকা দিতে পারিব না, আমাকে বাকীতে দিতে হইবে।' সে বলিল 'আমি আপনাকে জানি। এখন টাকা না দিলেও চলবে- মাসকাবারে দিবেন।' সেই মুহুর্ত্তেই চাউলের সমস্যা এইভাবে সমাধান হওয়ায় আমি একেবারে অভিভূত হইয়া পড়িলাম। শ্রীশ্রী ঠাকুর যে সর্ব্বদাই সঙ্গে সঙ্গে আছেন এবং আমাদিগকে বিপদ হইতে রক্ষা করিতেছেন তাহা বুঝিতে আর বাকী রহিল না।
"শ্রীশ্রী ঠাকুরের সঙ্গে"
শ্রীতুলসীদাস গঙ্গোপাধ্যায়
শ্রীশ্রী রামঠাকুর আবির্ভাব শতবার্ষিকী স্মারকগ্রন্থ
পৃষ্ঠা: ১৭২
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন