শনিবার, ৮ আগস্ট, ২০১৫



দেবতারা যাঁর সেবা করবার জন্য সতত উন্মুখ, সেই দেবসেব্য শ্রীশ্রী ঠাকুর ভক্তদের কিভাবে সেবা করেছেন- তাঁর মাধুর্যমন্ডিত লীলা দেখতে পাই 'শ্রুতিতে রামঠাকুর' গ্রন্থের ১ম খন্ডের ৫ম সংখ্যক কাহিনীতে। কলকাতার ঢাকুরিয়া নিবাসী পরম ভক্ত শ্রদ্ধেয় মতিলাল বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয় সকালে বাজারে যাচ্ছেন। এমন সময় শ্রীশ্রী ঠাকুর মতিবাবুকে আদেশ করলেন- বাজার থেকে যেন চিতলের পেটি ও বুক লাল কই মাছ আনা হয়। ঠাকুরের এই নির্দেশে মতিবাবু বিস্ময়ে হতবাক। ক্ষুধা-তৃষ্ণা রহিত শ্রীশ্রী ঠাকুরের হঠাত মাছের কী বা প্রয়োজন? কিন্তু গুরুবাক্য শিরোধার্য করে উক্ত দ্রব্যাদি মতিবাবু বাজার থেকে আনলেন। ঠাকুর উত্ফুল্ল চিত্তে মতিবাবুর সহধর্মিনীকে মাছ রান্নার পদ্ধতি বিশদভাবে বুঝিয়ে দিলেন। দীর্ঘদিন পর হঠাত ঐ দিনই বেলা ১২ টার সময় ডাঃ জে.এম দাশগুপ্ত এসে হাজির মতিবাবুর বাড়িতে। ঠাকুর তাঁকে এখানেই দ্বিপ্রাহরিক আহার করতে বললেন। বাড়িতে খবর পাঠানোর জন্য ডাক্তারবাবু তাঁর ড্রাইভারকে পাঠালেন এবং ঠাকুরের নির্দেশ মতো ফেরার পথে দুই প্যাকেট সিগারেট আনতে বললেন। এদিকে ডাক্তারবাবু স্নানের জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন। শ্রীশ্রী ঠাকুর মতিবাবুর সহধর্মিনীর কাছ থেকে তেল এনে ডাক্তারবাবুর মাথায় ঘষছেন। ঠাকুরের এই আচরণে ডাক্তারবাবু খুব অস্বস্তি বোধ করছেন। ভক্তবত্সল ঠাকুরের ভক্তসেবা এখানেই থেমে রইল না। ডাক্তারবাবুর স্নানের জন্য এক বালতি জল টিউবওয়েল পাম্প করে তুলে রেখেছেন। ডাক্তারবাবু তো মহাবিপদে পড়লেন। স্বয়ং ভগবানের আনা জলে ভক্ত স্নান করবেন-এটা কখনো সম্ভবপর? অবশেষে ডাক্তারবাবুর অনেক অনুরোধে ঠাকুরকে এ কাজ থেকে নিরস্ত করা গেল এবং ডাক্তারবাবুর স্নান সম্পন্ন হল।

কিছুক্ষণ পর ভক্তপ্রবর প্রভাতচন্দ্র চক্রবর্তী মহাশয় উপস্থিত হলে ঠাকুর তাঁকেও স্নান করিয়ে দুপুরে খাওয়ার জন্য ব্যস্ত হয়ে উঠলেন। ডাক্তারবাবু ঠাকুরকে নিবৃত্ত করে প্রভাতবাবুকে স্নান করিয়ে আনলেন। স্নান সমাপনান্তে দুই ভক্ত বসেছেন দ্বিপ্রাহরিক আহারে। ঠাকুর একটি মোড়ায় বসে তাদের আহারের তদারকি করছেন। ভক্তসেবার পরবর্তী নিদর্শন আরও চমকপ্রদ। ডাক্তারবাবুর ধূমপানের নেশা না থাকলেও, প্রভাতবাবুর ধূমপান করার অভ্যাস ছিল। তাই প্রভাতবাবু অনতিদূরে একটি গাছতলায় বসে বেশ আয়েশ করে সিগারেটে সুখটান দেবার জন্য পকেটে হাত দিয়ে দেখেন যে তাঁর পকেটে সিগারেট নেই। সেই সময় ডাক্তারবাবু দু'প্যাকেট সিগারেট এনে প্রভাতবাবুর হাতে দিয়ে বললেন- এই ধূমপানের ব্যবস্থা ঠাকুর স্বয়ং করেছেন। ভক্তসেবা এখানেই শেষ নয়। দ্বিপ্রাহরিক বিশ্রামের জন্য ঠাকুর নিজ হাতে অনেক যত্ন করে শয্যার ব্যবস্থা করেছেন। মা যেমন তাঁর সন্তানের প্রতি অপত্য স্নেহ ভালবাসায় তার সেবা করেন শ্রীশ্রী ঠাকুরের সেই প্রকার মাতৃবত আচরণে ভক্তদের নয়ন অশ্রুপূর্ণ হয়ে উঠল।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন