সেই
সময় প্রায় তিন বত্সর তিনি ঢাকা জিলার রাজবাড়ী থানার অন্তর্গত বেরপাড়া
(বেহেরপাড়া) গ্রামের শ্রীসুধীর কুমার সারখেলের বাড়ীর ঠাকুর ঘরে বাস
করিয়াছেন। ঐ বাড়ী হইতে প্রায় আধ মাইল দূর বাহেরক গ্রামে সত্যরঞ্জন
গাঙ্গুলীর ও জ্ঞান আচার্য্য মহাশয়ের বাড়ী ছিল। উক্ত সত্যরঞ্জন গাঙ্গুলীর
কাকা মনমোহন গাঙ্গুলী অতি দুশ্চরিত্র ছিল বলিয়া তাহাকে গ্রামবাসীগণ অত্যন্ত
ঘৃণার পাত্র সাব্যস্ত করিয়া সমাজচ্যুত করিয়া রাখিয়াছিল। তাহার কার্য্যস্থল
ঢাকা শহরে একটি বারবনিতার প্রেমে মুগ্ধ হইয়া সে তাহার বাড়ীতেই বহু বত্সর
যাবৎ কালাতিপাত করিতেছিল, দেশের আত্মীয় স্বজন কাহারও সঙ্গে কোন সম্বন্ধ
রাখিত না। প্রৌরাবস্থায় উপনীত হইলে সে ভিশন রক্তামাশায় রোগে আক্রান্ত হয়।
তখন একেবারেই সহায় সম্বল বিহীন অবস্থা হওয়ায় কোথাও যাওয়ার তাহার শক্তি ছিল
না। ক্রমে তাহার মরনোন্মুখ অবস্থা দেখিয়া ঐ মেয়েটি মনে মনে স্থির করিল যে,
মনমোহন গাঙ্গুলীর বাড়ীর নিকটবর্ত্তী কোনও স্থানে তাহাকে রাখিয়া আসিলে
নিশ্চয়ই কেহ না কেহ দয়ার্দ্র-চিত্তে তাহার শেষ সময়ের ক্রিয়া আদি সম্পন্ন
করিবে। এই চিন্তা করিয়া সে অতি কষ্টে উক্ত মনমোহন গাঙ্গুলীকে তাহার বাড়ীর
নিকটস্থ ভোমতাতা নামক কোন বৈষ্ণবের আখড়ার জঙ্গলের মধ্যে রাখিয়া যায়। ঐ
আখড়াবাসীরা তাহাকে চিনিতে পারিয়া তাহাদের ঘরে আশ্রয় দেয়। ক্রমে গ্রামবাসীরা
সকলেই এই সংবাদ পায়। কিন্তু তাহার জন্য সহানুভূতি হওয়া দুরে থাক বরং
নাসিকা কুঞ্চন করিয়া অনেকেই, এমন কি তাহার ভ্রাতুষ্পুত্র সত্যরঞ্জনও, 'যেমন
কর্ম্ম তেমন ফল', ইত্যাদি নানা কথা বলিয়া তাহার নিকটে গেলেও মহাপাপ হইবে
মনে করিয়া দুরে সরিয়া থাকে। ঠাকুর, (তখন তাঁহাকে সকলে 'রামসাধু' ডাকিত) এই
সংবাদ পাইয়া সত্যরঞ্জন বাবুকেও নানাভাবে বুঝাইয়া ঐ আখড়ায় নিয়া যান এবং উভয়ে
মিলিয়া অতি কষ্টের সহিত সযত্নে সত্যরঞ্জন বাবুর বাড়ীতে একখানা ছোট ঘরে
স্থান দেন। ঐ ঘরে থাকিয়া প্রায় তিন মাস কাল এই মৃত্যু শয্যায় শায়িত
রক্তামশয়ের রোগীর দিবারাত্রি সর্ব্বপ্রকারের সেবা পরিচর্য্যা একাকীই
সম্পন্ন করেন। তাহার দেহত্যাগ হইলে স্থানীয় একটি লোকও তাহাকে স্পর্স করিতে
রাজী না হওয়ায়, ঠাকুর ও উক্ত সত্যরঞ্জন বাবু নিজ হাতে আম গাছ কাটিয়া যথা
নিয়মে তাহার অন্ত্যষ্টি ক্রিয়া সমাপন করেন।
এখানে উল্লেখযোগ্য যে, যে সময়ে মনমোহন দেহত্যাগ করে ঠিক ঐ সময়ে তাহার অতি নিকটস্থ প্রতিবেশী নানা শাস্ত্রবিদ, অহরহ গীতা ও চন্ডীপাঠ এবং জ্যোতিষী হেমচন্দ্র আচার্য্যও দেহত্যাগ করেন। তাঁহার শ্মশানে বহু লোক সমবেত হইয়া খুব আড়ম্বরের সহিত অন্ত্যষ্টি ক্রিয়া সম্পন্ন করেন। কিন্তু মনমোহনের শ্মশানে ঠাকুর ও সত্যবাবু ছাড়া আর কেহই যায় নাই।
উক্ত হেমচন্দ্র আচার্য্য মহাশয় ঠাকুরের একনিষ্ট ভক্ত জ্ঞান আচার্য্য মহাশয়ের জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা ছিলেন। জ্ঞান দাদা জানিতেন যে, আত্মা দেহ ত্যাগ করিলে কি অবস্থায় আছে ইহা গোপনে জিজ্ঞাসা করিলে ঠাকুর তাঁহার ভক্তগনকে প্রকৃত অবস্থা জানাইয়া দিতে সক্ষম ছিলেন। জ্ঞান দাদা ঠাকুরকে একই সময় মৃত এই দুই ব্যাক্তির দেহত্যাগের পরের অবস্থার কথা জিজ্ঞাসা করিলে ঠাকুর বলিয়াছিলেন যে, মনমোহনের আত্মা মুক্ত হইয়াছে, তাহার আর দেহ ধারণ করিতে হইবে না। কিন্তু হেম বাবুর আবার জন্ম হইবে।
উপরোক্ত ঘটনার কথা খুব সম্ভবতঃ আমি জ্ঞান দার মুখে এবং অন্য কাহারও মুখেও বহুবত্সর পূর্বেই শুনিয়াছি, কিন্তু তখন কিছুই লিপিবদ্ধ করার কি স্মরণ রাখার প্রয়োজন বোধ না করায় লোকের ও স্থানাদির নাম ভুলিয়া গিয়াছিলাম। এবার পাহাড়তলী কৈবল্যধাম আশ্রম প্রতিষ্ঠার প্রায় প্রথম হইতেই নিত্যসেবাপরায়না শ্রীশ্রী ঠাকুরের অত্যন্ত স্নেহের পাত্রী পরম শ্রদ্ধেয়া প্রিয়ভাষিনী দিদির সঙ্গে শ্রীশ্রী ঠাকুর প্রসঙ্গ আলোচনা কালে তাঁহার নিকট সকল কথা শুনিয়া তাঁহারই সমক্ষে এই বৃত্তান্ত লিপিবদ্ধ করিলাম। তিনি ঐ ঘটনার সময় ঐ ঘটনার সময় ঐ সকল বাড়ীর অতি নিকটবর্তী তাঁহার পিত্রালয়ে থাকায় স্বয়ং সমস্ত প্রত্যক্ষ করিয়াছিলেন।
শ্রীশ্রী ঠাকুর রামচন্দ্রদেব স্মরণে
শ্রী শুভময় দত্ত
পৃষ্ঠা: ১২৯
এখানে উল্লেখযোগ্য যে, যে সময়ে মনমোহন দেহত্যাগ করে ঠিক ঐ সময়ে তাহার অতি নিকটস্থ প্রতিবেশী নানা শাস্ত্রবিদ, অহরহ গীতা ও চন্ডীপাঠ এবং জ্যোতিষী হেমচন্দ্র আচার্য্যও দেহত্যাগ করেন। তাঁহার শ্মশানে বহু লোক সমবেত হইয়া খুব আড়ম্বরের সহিত অন্ত্যষ্টি ক্রিয়া সম্পন্ন করেন। কিন্তু মনমোহনের শ্মশানে ঠাকুর ও সত্যবাবু ছাড়া আর কেহই যায় নাই।
উক্ত হেমচন্দ্র আচার্য্য মহাশয় ঠাকুরের একনিষ্ট ভক্ত জ্ঞান আচার্য্য মহাশয়ের জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা ছিলেন। জ্ঞান দাদা জানিতেন যে, আত্মা দেহ ত্যাগ করিলে কি অবস্থায় আছে ইহা গোপনে জিজ্ঞাসা করিলে ঠাকুর তাঁহার ভক্তগনকে প্রকৃত অবস্থা জানাইয়া দিতে সক্ষম ছিলেন। জ্ঞান দাদা ঠাকুরকে একই সময় মৃত এই দুই ব্যাক্তির দেহত্যাগের পরের অবস্থার কথা জিজ্ঞাসা করিলে ঠাকুর বলিয়াছিলেন যে, মনমোহনের আত্মা মুক্ত হইয়াছে, তাহার আর দেহ ধারণ করিতে হইবে না। কিন্তু হেম বাবুর আবার জন্ম হইবে।
উপরোক্ত ঘটনার কথা খুব সম্ভবতঃ আমি জ্ঞান দার মুখে এবং অন্য কাহারও মুখেও বহুবত্সর পূর্বেই শুনিয়াছি, কিন্তু তখন কিছুই লিপিবদ্ধ করার কি স্মরণ রাখার প্রয়োজন বোধ না করায় লোকের ও স্থানাদির নাম ভুলিয়া গিয়াছিলাম। এবার পাহাড়তলী কৈবল্যধাম আশ্রম প্রতিষ্ঠার প্রায় প্রথম হইতেই নিত্যসেবাপরায়না শ্রীশ্রী ঠাকুরের অত্যন্ত স্নেহের পাত্রী পরম শ্রদ্ধেয়া প্রিয়ভাষিনী দিদির সঙ্গে শ্রীশ্রী ঠাকুর প্রসঙ্গ আলোচনা কালে তাঁহার নিকট সকল কথা শুনিয়া তাঁহারই সমক্ষে এই বৃত্তান্ত লিপিবদ্ধ করিলাম। তিনি ঐ ঘটনার সময় ঐ ঘটনার সময় ঐ সকল বাড়ীর অতি নিকটবর্তী তাঁহার পিত্রালয়ে থাকায় স্বয়ং সমস্ত প্রত্যক্ষ করিয়াছিলেন।
শ্রীশ্রী ঠাকুর রামচন্দ্রদেব স্মরণে
শ্রী শুভময় দত্ত
পৃষ্ঠা: ১২৯
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন