১৯৩৭
কিংবা ১৯৩৮ ইং সনে এক কাজের দায়িত্ব পেয়ে জামালপুর থেকে কলকাতায় বদলি
হয়ে এলেন রামঠাকুরের আশ্রিত শ্রীযুক্ত মাধবচন্দ্র মজুমদার। তাঁকে কাজে
যেতে হত জি. পি. ও তে। ডিউটি ছিল বেলা দুটো থেকে রাত দশটা। অফিসে যাওয়া
আসার সুবিধার জন্য রসা রোডের কাছে মহিম হালদার স্ট্রিটে বাড়ি ভাড়া করে
স্বপরিবারে বসবাস শুরু করে দিলেন। তাঁর বড় ছেলের নাম শ্রী দুর্গাপ্রসাদ
মজুমদার - কলেজে পরে, উঁচু ক্লাসের ছাত্র। কলেজে আসা যাওয়া ছাড়া সে বড়
একটা বাড়ির বাইরে থাকে না, বাড়ির সন্ধ্যা আরতি ও কীর্তনে প্রায়ই সে
অংশগ্রহন করে।
একদিন মাধববাবু জি.পি.ও থেকে রাত এগারটায় বাড়ি ফিরে শোনেন, দুর্গাপ্রসাদ চাঁদ পুরের এক বন্ধুর সাথে বিকেলের দিকে বেড়াতে বেরিয়েছে - এখন ও ফিরেনি, এমন কি আজকের সন্ধ্যা আরতির সময়ও তাকে দেখা যায় নি। বাড়ির সবাই খুবই চিন্তিত। সে কোথায়, কোথায় যেতে পারে, তাঁর খোঁজ করেও কাজের কাজ কিছুই হলো না।
বাধ্য হয়ে মজুমদার মশাই বিভিন্ন থানা, হাসপাতালে টেলিফোনে খোঁজ নেওয়া শুরু করে দিলেন। -খবর পাওয়া গেল মোটর গাড়ির চাপে আহত একটি ছেলেকে শম্ভুনাথ পন্ডিত হাসপাতালে আনা হয়েছে - ছেলেটির নাম দুর্গাপ্রসাদ মজুমদার। এক ডাক্তারের গাড়িতে ছেলেটি চাপা পড়েছে আর সেই ডাক্তারবাবু ছেলেটিকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। মাধববাবু ছুটে এলেন ভবানীপুর সাউথ সবার্বন (মেইন) স্কুলের মাষ্টার শ্রীযুক্ত অক্ষয় কুমার মজুমদারের বাড়িতে, তাঁকে নিয়েই চলে আসেন হাসপাতালে। -দেখেন হাতে পায়ে মাথায় ব্যান ডেজ বাঁধা, সংজ্ঞাহীন অবস্থায় অযত্নে পড়ে আছে শ্রীমান। হাসপাতালে সেই সময়ের কর্ত্তব্যরত ডাক্তার, মোটর দুর্ঘটনায় আহত যুবকের পরিচয় পেয়ে কিছুটা ভালো ব্যাবস্থা করে দিলেন।
কি ভাবে, কেউ জানেন না, খবরটা ডাক্তার জে.এম দাশগুপ্তের কানেও পৌঁছোয়। পরদিন তিনি ঐ হাসপাতালে এসে দুর্গাপ্রসাদের জন্য কেবিনের ব্যাবস্থা করে দিলেন। আশ্চর্যের বিষয় হল যে ডাক্তারের গাড়ীতে সে চাপা পড়েছিল, সেই ডাক্তার হচ্ছেন, আবার ডাক্তার জে.এম দাশগুপ্তের ছাত্র। ঐ হাসপাতালেরই এক ডাক্তার। এই সব যোগাযোগের ফলে শ্রীমান দুর্গাপ্রসাদের জন্য দিন রাত্রির নার্স আর চিকিত্সার ভালো ব্যাবস্থা হলো। সকলের চেষ্টায়, মোটর দুর্ঘটনার চার দিন পর, তার জ্ঞান ফেরে কিন্তু সে কাউকে চিনতে পারে নি -ভুল বকে। ডাক্তারদের মতে মস্তিষ্কেই আঘাত সব চেয়ে বেশী। এদিকে রামঠাকুর তখন চট্টগ্রামে। পুত্রের প্রাণভিক্ষা ও মঙ্গল কামনার কাতর আবেদন জানিয়ে মাধববাবু ঠাকুরকে যে চিঠি লিখেছিলেন সেই চিঠির কোন উত্তর নেই। তখন তাঁর মনে হচ্ছিল ..."শ্রীমানের জীবন সংশয়, অথবা প্রাণ রক্ষা পাইলেও পাগল হইয়া থাকিবে।"...তিন সপ্তাহের চিকিত্সায় দুর্গাপ্রসাদ একটু ভালো হলে মাধববাবু তাকে বাড়ি নিয়ে আসেন- অসুস্থ দুর্গাপ্রসাদকে রাখেন তিন তলার এক ঘরে।
-নির্জন দুপুরে দুর্গাপ্রসাদের মা দুর্গাপ্রসাদের ঘরের দরজায় বসে একমনে ঠাকুরের চিন্তা করছিলেন এমন সময় দুর্গাপ্রসাদের মা'য়ের অনুভব হলো কে যেন পিছনে দাঁড়িয়ে আছেন। পিছন ফিরে তিনি ঠাকুরকে দেখেই হতভম্ব। নিজেকে সামলে নিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন-"ঠাকুর মশায়! কথা হইতে আসিলেন? একা একা কি করিয়া আসিলেন, এ বাড়ি তো আপনি চিনেন না, আর তো কোন দিন আসেন নাই।" ঠাকুরকে দেখে তাঁর মনে হচ্ছিল, তিনি যেন রোদে পুড়ে লাল হয়ে গিয়েছেন। ঠাকুর বলেছিলেন, 'স্মরণ করিয়াছেন তাই আসিয়াছি, স্মরণ করিলে বাড়ি চিনিবার প্রয়োজন হয় না, ঠিকানাই বাড়ি চিনাইয়া দেয়।" দুর্গাপ্রসাদের মা ঠাকুরকে সমস্ত ঘটনাই বলেন। "জানি", একথাটা বলেই ঠাকুর নীরব। শ্রীমানের মাথায় গায়ে হাত বুলিয়ে আশীর্ব্বাদ করে ঠাকুর বললেন "রাস্তায় হাটার সময় নাম করিতে পার না, তাহা হইলে তো আঘাত লাগিত না।' রামঠাকুর এবার ব্যাস্ত হয়ে উঠলেন ফিরে যাওয়ার জন্য। মাধববাবুর স্ত্রীর প্রশ্নের উত্তরে ঠাকুর তাঁকে বললেন, গত রাতেই তিনি ১১ নং আর্ল স্ট্রিটে কুঞ্জবাবুর বাড়িতে এসে উঠেছেন সেখানেই ফিরে যাবেন। "এখন আসি" এই বলেই ঠাকুর সিঁড়ি দিয়ে দ্রুত নিচে নামতে লাগলেন, দুর্গাপ্রসাদের মা ঠাকুরের সাথে নীচে নেমে এলেন।
সে বাড়িতে একটাই মাত্র সদর দরজা। দরজায় বাড়ি ওয়ালার ২৫/২৬ বছরের ছেলেটি বসেছিল, বাড়িতে কেউ নেই -বাধ্য হয়ে ঐ ছেলেটিকেই ঠাকুরের জন্য টেক্সী ডেকে দেবার অনুরোধ করেন দুর্গাপ্রসাদের মা। এর মধ্যেই বাড়ির সদর দরজায় একটা টেক্সী এসে দাঁড়ায় -ঠাকুর তখনই উঠে বসলেন। টেক্সী ভাড়া বাবদ তিনি দুটো টাকা দিলেন ঠাকুরের হাতে। ঠাকুর টাকা দুটো ড্রাইভারের হাতে দিয়ে গাড়ী ছেড়ে দিতে বলেন। -গাড়ী চলে গেল। বাড়ি ওয়ালার ছেলেটি অনুসন্ধিত্সু হয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসা করেন, "এই বৃদ্ধ কে? আপনার কে কি হয়, কখন আসিয়াছেন, আবার এখনই চলিয়া গেলেন কেন?" ইত্যাদি নানান প্রশ্ন। দুর্গাপ্রসাদের মা'য়ের উত্তর "ইনি আমার বাবা, আমার ছেলের অসুখ, আধঘন্টা আগে তাহাকে দেখিতে আসিয়াছিলেন, আবার এখন অন্যত্র চলিয়া গেলেন।" ছেলেটি অবাক হয়ে তাঁকে প্রশ্ন করে "ওঁকে-ত এই কয় দিনের মধ্যে আর দেখি নাই। আজও এক ঘন্টার অধিক সময় এই খানেই বসিয়া আছি ভিতরে যাওয়ার সময়ে তো দেখি নাই।" আপনার হয়তো সময়ের ভুল হইয়াছে।"
ইতিমধ্যে আর এক কান্ড-সেই টেক্সী ড্রাইভার কিছুক্ষণ পর ফিরে এসে বলেন, "মা! আমি আপনার বুড়া বাবাকে হারাইয়া ফেলিয়াছি। তিনি গাড়িতে উঠিয়াই আমার হাতে দুইটি টাকা দিলেন। হাজরা মোড়ে একটা বড় দোকানের সামনে গাড়ি থামাইয়া দোকানে ঢুকিলেন। অনেকক্ষণ পর্য্যন্ত তিনি না আসায় দোকানে যাইয়া বুড়া বাবার চেহারার বর্ণনা দিয়া জিজ্ঞাসা করিলেম তিনি কোথায়? তাহারা কিছুই বলিতে পারিল না। কেবল বলিল এমন লোক কেহ দোকানে আসে নাই।" পরের ঘটনা শ্রীযুক্ত মাধবচন্দ্র মজুমদারের ভাষাতেই লিখেছি...."কুঞ্জ বাবুর বাড়িতে পর দিন প্রাতে যাইয়া ঠাকুরের বিষয় অনুসন্ধান করিলাম।তাঁহারা স্বামী স্ত্রী উভয়ই জানালেন যে পর্যাক্রমে এই ঘরের দরজায় পাহারায় রত আছেন, কাহারও ঘরে যাইবার হুকুম নাই, তিনি গোপনে আছেন। তবে তিনি কাল ঐ সময় ঘরের বাহির হয়েন নাই, ইহা নিশ্চিত। এই হেয়ালি আজও হেয়ালিই রহিয়া গিয়াছে।"...
মাধব বাবু আরও লিখেছেন..."এই ঘটনাটি লিপিবদ্ধ করিবার উদ্দ্যেশ্য আমার আর কিছুই নহে ঠাকুর অনেক সময় কথাচ্ছলে বলিয়াছেন যে "যখনই কোন প্রকার প্রসঙ্গ হয় কিংবা স্মরণ হয় তখনি মনে করিবেন আমি সেই স্থানে উপস্থিত আছি, সেই সময়ে ভ্রমশূন্য হইয়া কাজ করিবেন।" এই বাক্যের সত্যতা প্রমানের নির্দ্দেশই হইল এই ঘটনা। অবশ্য এই বাক্য দৃঢ় ভাবে হৃদয়ে আঢ্য করিয়া রাখা আমাদের ন্যায় সাধারণ জীবের পক্ষে সহজ সাধ্য নহে। ....
"তাঁহার অশির্ব্বাদে আমার ছেলে সুস্থ হইয়া উঠিয়াছে এবং মস্তিষ্কেরও সুস্থতা ঘটিয়াছে।"... এই ঘটনার কিছুদিন পরেই মজুমদার মশাইকে চট্টগ্রামে বদলি করা হয়।
একদিন মাধববাবু জি.পি.ও থেকে রাত এগারটায় বাড়ি ফিরে শোনেন, দুর্গাপ্রসাদ চাঁদ পুরের এক বন্ধুর সাথে বিকেলের দিকে বেড়াতে বেরিয়েছে - এখন ও ফিরেনি, এমন কি আজকের সন্ধ্যা আরতির সময়ও তাকে দেখা যায় নি। বাড়ির সবাই খুবই চিন্তিত। সে কোথায়, কোথায় যেতে পারে, তাঁর খোঁজ করেও কাজের কাজ কিছুই হলো না।
বাধ্য হয়ে মজুমদার মশাই বিভিন্ন থানা, হাসপাতালে টেলিফোনে খোঁজ নেওয়া শুরু করে দিলেন। -খবর পাওয়া গেল মোটর গাড়ির চাপে আহত একটি ছেলেকে শম্ভুনাথ পন্ডিত হাসপাতালে আনা হয়েছে - ছেলেটির নাম দুর্গাপ্রসাদ মজুমদার। এক ডাক্তারের গাড়িতে ছেলেটি চাপা পড়েছে আর সেই ডাক্তারবাবু ছেলেটিকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। মাধববাবু ছুটে এলেন ভবানীপুর সাউথ সবার্বন (মেইন) স্কুলের মাষ্টার শ্রীযুক্ত অক্ষয় কুমার মজুমদারের বাড়িতে, তাঁকে নিয়েই চলে আসেন হাসপাতালে। -দেখেন হাতে পায়ে মাথায় ব্যান ডেজ বাঁধা, সংজ্ঞাহীন অবস্থায় অযত্নে পড়ে আছে শ্রীমান। হাসপাতালে সেই সময়ের কর্ত্তব্যরত ডাক্তার, মোটর দুর্ঘটনায় আহত যুবকের পরিচয় পেয়ে কিছুটা ভালো ব্যাবস্থা করে দিলেন।
কি ভাবে, কেউ জানেন না, খবরটা ডাক্তার জে.এম দাশগুপ্তের কানেও পৌঁছোয়। পরদিন তিনি ঐ হাসপাতালে এসে দুর্গাপ্রসাদের জন্য কেবিনের ব্যাবস্থা করে দিলেন। আশ্চর্যের বিষয় হল যে ডাক্তারের গাড়ীতে সে চাপা পড়েছিল, সেই ডাক্তার হচ্ছেন, আবার ডাক্তার জে.এম দাশগুপ্তের ছাত্র। ঐ হাসপাতালেরই এক ডাক্তার। এই সব যোগাযোগের ফলে শ্রীমান দুর্গাপ্রসাদের জন্য দিন রাত্রির নার্স আর চিকিত্সার ভালো ব্যাবস্থা হলো। সকলের চেষ্টায়, মোটর দুর্ঘটনার চার দিন পর, তার জ্ঞান ফেরে কিন্তু সে কাউকে চিনতে পারে নি -ভুল বকে। ডাক্তারদের মতে মস্তিষ্কেই আঘাত সব চেয়ে বেশী। এদিকে রামঠাকুর তখন চট্টগ্রামে। পুত্রের প্রাণভিক্ষা ও মঙ্গল কামনার কাতর আবেদন জানিয়ে মাধববাবু ঠাকুরকে যে চিঠি লিখেছিলেন সেই চিঠির কোন উত্তর নেই। তখন তাঁর মনে হচ্ছিল ..."শ্রীমানের জীবন সংশয়, অথবা প্রাণ রক্ষা পাইলেও পাগল হইয়া থাকিবে।"...তিন সপ্তাহের চিকিত্সায় দুর্গাপ্রসাদ একটু ভালো হলে মাধববাবু তাকে বাড়ি নিয়ে আসেন- অসুস্থ দুর্গাপ্রসাদকে রাখেন তিন তলার এক ঘরে।
-নির্জন দুপুরে দুর্গাপ্রসাদের মা দুর্গাপ্রসাদের ঘরের দরজায় বসে একমনে ঠাকুরের চিন্তা করছিলেন এমন সময় দুর্গাপ্রসাদের মা'য়ের অনুভব হলো কে যেন পিছনে দাঁড়িয়ে আছেন। পিছন ফিরে তিনি ঠাকুরকে দেখেই হতভম্ব। নিজেকে সামলে নিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন-"ঠাকুর মশায়! কথা হইতে আসিলেন? একা একা কি করিয়া আসিলেন, এ বাড়ি তো আপনি চিনেন না, আর তো কোন দিন আসেন নাই।" ঠাকুরকে দেখে তাঁর মনে হচ্ছিল, তিনি যেন রোদে পুড়ে লাল হয়ে গিয়েছেন। ঠাকুর বলেছিলেন, 'স্মরণ করিয়াছেন তাই আসিয়াছি, স্মরণ করিলে বাড়ি চিনিবার প্রয়োজন হয় না, ঠিকানাই বাড়ি চিনাইয়া দেয়।" দুর্গাপ্রসাদের মা ঠাকুরকে সমস্ত ঘটনাই বলেন। "জানি", একথাটা বলেই ঠাকুর নীরব। শ্রীমানের মাথায় গায়ে হাত বুলিয়ে আশীর্ব্বাদ করে ঠাকুর বললেন "রাস্তায় হাটার সময় নাম করিতে পার না, তাহা হইলে তো আঘাত লাগিত না।' রামঠাকুর এবার ব্যাস্ত হয়ে উঠলেন ফিরে যাওয়ার জন্য। মাধববাবুর স্ত্রীর প্রশ্নের উত্তরে ঠাকুর তাঁকে বললেন, গত রাতেই তিনি ১১ নং আর্ল স্ট্রিটে কুঞ্জবাবুর বাড়িতে এসে উঠেছেন সেখানেই ফিরে যাবেন। "এখন আসি" এই বলেই ঠাকুর সিঁড়ি দিয়ে দ্রুত নিচে নামতে লাগলেন, দুর্গাপ্রসাদের মা ঠাকুরের সাথে নীচে নেমে এলেন।
সে বাড়িতে একটাই মাত্র সদর দরজা। দরজায় বাড়ি ওয়ালার ২৫/২৬ বছরের ছেলেটি বসেছিল, বাড়িতে কেউ নেই -বাধ্য হয়ে ঐ ছেলেটিকেই ঠাকুরের জন্য টেক্সী ডেকে দেবার অনুরোধ করেন দুর্গাপ্রসাদের মা। এর মধ্যেই বাড়ির সদর দরজায় একটা টেক্সী এসে দাঁড়ায় -ঠাকুর তখনই উঠে বসলেন। টেক্সী ভাড়া বাবদ তিনি দুটো টাকা দিলেন ঠাকুরের হাতে। ঠাকুর টাকা দুটো ড্রাইভারের হাতে দিয়ে গাড়ী ছেড়ে দিতে বলেন। -গাড়ী চলে গেল। বাড়ি ওয়ালার ছেলেটি অনুসন্ধিত্সু হয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসা করেন, "এই বৃদ্ধ কে? আপনার কে কি হয়, কখন আসিয়াছেন, আবার এখনই চলিয়া গেলেন কেন?" ইত্যাদি নানান প্রশ্ন। দুর্গাপ্রসাদের মা'য়ের উত্তর "ইনি আমার বাবা, আমার ছেলের অসুখ, আধঘন্টা আগে তাহাকে দেখিতে আসিয়াছিলেন, আবার এখন অন্যত্র চলিয়া গেলেন।" ছেলেটি অবাক হয়ে তাঁকে প্রশ্ন করে "ওঁকে-ত এই কয় দিনের মধ্যে আর দেখি নাই। আজও এক ঘন্টার অধিক সময় এই খানেই বসিয়া আছি ভিতরে যাওয়ার সময়ে তো দেখি নাই।" আপনার হয়তো সময়ের ভুল হইয়াছে।"
ইতিমধ্যে আর এক কান্ড-সেই টেক্সী ড্রাইভার কিছুক্ষণ পর ফিরে এসে বলেন, "মা! আমি আপনার বুড়া বাবাকে হারাইয়া ফেলিয়াছি। তিনি গাড়িতে উঠিয়াই আমার হাতে দুইটি টাকা দিলেন। হাজরা মোড়ে একটা বড় দোকানের সামনে গাড়ি থামাইয়া দোকানে ঢুকিলেন। অনেকক্ষণ পর্য্যন্ত তিনি না আসায় দোকানে যাইয়া বুড়া বাবার চেহারার বর্ণনা দিয়া জিজ্ঞাসা করিলেম তিনি কোথায়? তাহারা কিছুই বলিতে পারিল না। কেবল বলিল এমন লোক কেহ দোকানে আসে নাই।" পরের ঘটনা শ্রীযুক্ত মাধবচন্দ্র মজুমদারের ভাষাতেই লিখেছি...."কুঞ্জ বাবুর বাড়িতে পর দিন প্রাতে যাইয়া ঠাকুরের বিষয় অনুসন্ধান করিলাম।তাঁহারা স্বামী স্ত্রী উভয়ই জানালেন যে পর্যাক্রমে এই ঘরের দরজায় পাহারায় রত আছেন, কাহারও ঘরে যাইবার হুকুম নাই, তিনি গোপনে আছেন। তবে তিনি কাল ঐ সময় ঘরের বাহির হয়েন নাই, ইহা নিশ্চিত। এই হেয়ালি আজও হেয়ালিই রহিয়া গিয়াছে।"...
মাধব বাবু আরও লিখেছেন..."এই ঘটনাটি লিপিবদ্ধ করিবার উদ্দ্যেশ্য আমার আর কিছুই নহে ঠাকুর অনেক সময় কথাচ্ছলে বলিয়াছেন যে "যখনই কোন প্রকার প্রসঙ্গ হয় কিংবা স্মরণ হয় তখনি মনে করিবেন আমি সেই স্থানে উপস্থিত আছি, সেই সময়ে ভ্রমশূন্য হইয়া কাজ করিবেন।" এই বাক্যের সত্যতা প্রমানের নির্দ্দেশই হইল এই ঘটনা। অবশ্য এই বাক্য দৃঢ় ভাবে হৃদয়ে আঢ্য করিয়া রাখা আমাদের ন্যায় সাধারণ জীবের পক্ষে সহজ সাধ্য নহে। ....
"তাঁহার অশির্ব্বাদে আমার ছেলে সুস্থ হইয়া উঠিয়াছে এবং মস্তিষ্কেরও সুস্থতা ঘটিয়াছে।"... এই ঘটনার কিছুদিন পরেই মজুমদার মশাইকে চট্টগ্রামে বদলি করা হয়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন