বৃহস্পতিবার, ২৩ জুলাই, ২০১৫


কোন ভক্তের পত্রের উত্তরে শ্রীশ্রী ঠাকুর লিখিয়াছিলেন "সর্ব্বশক্তিমান ভগবান সকলই সহ্য করিতে পারেন বলিয়া এবং কাহাকেও কোনরূপ উপেক্ষা করেন না, বিরক্তও হন না বলিয়া লোকে ভগবান বলে। তাঁহার ভক্তও তাঁহার কাছ হইতে শক্তি আহরণ এইভাবেই করে।" বেদবাণী ১/১০২

দৃষ্টান্ত

(1)উপরোক্ত বিষয়ে শ্রীশ্রী ঠাকুরের একনিষ্ঠ ভক্ত শ্রীমান উপেন্দ্র কুমার সাহার নিকট হইতে দুইটী ঘটনা শুনিয়া আমি তাহা নিম্নে সংক্ষেপে বিবৃত করিতেছি।
একজন বৈষ্ণব শ্রীশ্রী ঠাকুরের নিকট চৌমুহনী আশ্রমে অনেক সময়েই যাইত এবং প্রত্যহই প্রত্যাবর্ত্তনকালে শ্রীশ্রী ঠাকুর নিকট হইতে নিত্যানন্দের ভোগের জন্য নানা প্রকারের ফলাদি পাইত।
সে লক্ষ্য করিতে লাগিল যে, ঠাকুরের নিকট কেহ কিছু প্রার্থী হইলে তিনি উপস্থিত কোন ভক্তকে তাহা দিয়া দিতে বলিতেন। ইহাতে তাহার লোভ আরও বাড়িয়া গেল। একদিন সে খুব দুঃখ প্রকাশ করিয়া বলিল যে, তাহার কয়েক বাঁধ ঢেউ(তোলা) টিন চুরে নিয়া যাওয়ায় সে খুবই বিপন্ন অবস্থায় পড়িয়াছে। এই কথা তাহার বলার কারণ তথাকার ঠাকুরের সেবকদের মধ্যে কয়েকজন খুব বড় টিনের ব্যাবসায়ী ছিল। তাহার বিশ্বাস ছিল যে, ঠাকুর ভক্তগনকে বলিয়া তাহাকে কয়েক বাঁধ টিন দিয়া দিবেন। ঐ বৈষ্ণবের সমস্ত কথা যে মিথ্যা তাহা ঠাকুর স্বয়ং জানা সত্ত্বেও, বৈষ্ণবের প্রার্থনা অনুযায়ী ভক্তদের তাহাকে কিছু টিন দিতে বলিলেন। ভক্তগণ বৈষ্ণবের সততা মনে মনে সন্দেহ করিয়া অবিলম্বে একটি লোককে তাহার বাড়িতে পাঠাইয়া জানিলেন যে, চুরির বৃত্তান্ত সর্ব্বৈব মিথ্যা। এই কথা ঠাকুরকে জানাইলে ঠাকুর তাহার প্রতি কোন ক্রোধ বা বিরক্তির ভাব প্রকাশ না করিয়া বলিলেন, "তাহার প্রয়োজনবোধ তো হইয়াছিল, সে জন্যই সে চাহিয়াছিল।"


(২) ঠাকুরের কোন ভক্ত নোয়াখালী হইতে পার্ব্বত্য ত্রিপুরার অন্তর্গত উদয়পুরে যাইয়া কোন সমৃদ্ধিশালী ব্যক্তির নিকট শ্রীশ্রী ঠাকুরের দস্তখতি জাল এক পত্র দেখাইয়া বলিল যে তাহাকে তিনি তথায় আশ্রম প্রতিষ্ঠা করিবার জন্য পাঠাইয়াছেন। শ্রীশ্রী ঠাকুরের নাম ঐ ভদ্রলোকের জানা থাকায় তিনি ঠাকুরের আদেশ শিরোধার্য করিয়া একখানা দালান প্রস্ত্তুত্ক্রমে আশ্রম প্রতিষ্ঠা করিলেন এবং তিনি সস্ত্রীক ঠাকুরের তথাকথিত ঐ ভক্তের নিকট হইতে নাম লইলেন। সেই ভদ্রলোকের যত্নে ভক্তটি সস্ত্রীক সে আশ্রমে থাকিয়া কিছুকাল পরমসুখে কালাতিপাত করিতে লাগিল।
ক্রমে নানা কারণে ঐ ভদ্রলোকদের মনে সন্দেহের উদ্রেক হইতে লাগিল। ভদ্রলোকটি চৌমুহনীতে শ্রীশ্রী ঠাকুরের নিকট আসিলেন এবং সেই ভক্ত সম্বন্ধে সমস্ত কথা লিখিয়া একখানা পত্র ঠাকুরকে দিলেন। ঠাকুর পত্রখানা পড়িয়া ভদ্রলোকটিকে নানা উপদেশ দিলেন। কিন্তু জালিয়াত ভক্ত সম্পর্কে কোন কথাই বলিলেন না।
ভদ্রলোকটির নিকট শ্রীশ্রী ঠাকুরের অপর সেবক নরেদ্র ভুঁইয়া সমস্ত কথা শুনিয়া ক্রোধে অধীর হইয়া উঠিলেন। কিন্তু ভদ্রলোকটি বলিলেন, "সে মিথ্যা কথা বলুক, আর যাহাই করুক, তাহারই দরুন আমি আজ পরম রত্ন লাভ করিলাম। সুতরাং রাগ করিবেন না। "
ভদ্রলোকটি চলিয়া যাওয়ার পর শ্রীশ্রী ঠাকুর শ্রীমান উপেন ও নরেন ভায়ার নিকট বলিলেন, "অনেকেই উপদেশ শুনিতে আসে কিন্তু কিছুই গ্রহণ করেন না। এই ভদ্রলোকটি কিছু গ্রহণ করিয়াছেন।"


শ্রীশ্রী ঠাকুর রামচন্দ্রদেব প্রসঙ্গ ও অমৃতবাণী
শ্রী শুভময় দত্ত
পৃষ্ঠা:৩১

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন