মঙ্গলবার, ২৮ জুলাই, ২০১৫


''আমিই সত্যনারায়ণ! আমিই সত্যনারায়ণ! শত ধারালো অস্ত্র নিক্ষিপ্ত হইলেও আপনাদের কিছুই হইবে না।"


ঠাকুর তখন চৌমুহনীতে। তখন সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাহাঙ্গামা চরিতেছে। হঠাত একদিন শুনিলাম যে ঠাকুর ফেনীতে প্রমথদাদার বাসায় আসিয়াছেন। ততক্ষনাত গিয়া ঠাকুর দর্শন করিয়া প্রনাম করিলাম। ঠাকুর তখনই বালিশের তলা হইতে গোটাবারো টাকা লইয়া আমাকে দিয়া বলিলেন, 'এই টাকা দিয়া সত্যনারায়ণ পূজার আয়োজন করেন। আজ সন্ধ্যায় আপনিই পূজা করবেন।'
শুনিয়া আমি তো অবাক! কেননা সন্ধ্যাপুজা দূরের কথা, গায়ত্রী মন্ত্রও আমি ভাল করিয়া উচ্চারণ করিতে পারি না। আমি কী পূজা করিব? তাছাড়া পন্ডিতপ্রবর শ্রীযুক্ত শরৎ কাব্যতীর্থ মহাশয় ঠাকুরের নিকট বসিয়া আছেন। তাঁহাকে পূজার ভার না দিয়া আমাকে কেন পূজা করিতে বলিলেন তাহার কারণ অনুধাবন করিতে পারিলাম না।
ঠাকুরের আদেশানুযায়ী ঐদিন সন্ধ্যায় তাঁহার আশীর্ব্বাদ লইয়া যে ঘরে ঠাকুরের শ্রীপট আছে সেখানে যাইয়া পূজায় বসিলাম, আঙ্গিনায় কীর্ত্তন চরিতে লাগিল। কোন প্রকারে পূজা শেষ করিলাম। বহু লোকের সমাগম হইয়াছিল, তাহারা প্রসাদ পাইয়া চলিয়া গেল। তারপর ফুল চন্দন লইয়া ঠাকুরের শ্রীদেহ পূজা করিবার মানসে ঠাকুরঘরে প্রবেশ করিলাম। দেখিলাম ঠাকুর স্থিরাসনে, দেহ জ্যোতির্ম্ময়, ঘরটী সৌরভে ভরা। আমি শ্রীপদে পতিত হওয়া মাত্র বলিতে লাগিলেন, ''আমিই সত্যনারায়ণ! আমিই সত্যনারায়ণ! শত ধারালো অস্ত্র নিক্ষিপ্ত হইলেও আপনাদের কিছুই হইবে না।"
ঠাকুরের লীলা সম্পর্কে কিছু লিখা আমার সাধ্যাতীত। তাঁহার সন্নিধানে থাকিয়া দীর্ঘদিন তাঁহার পদসেবা করিবার সৌভাগ্য আমার হইয়াছিল। তাঁহার পদপ্রান্তে বসিয়া কত কথা শুনিয়াছি, কত অলৌকিক ঘটনা প্রত্যক্ষ করিয়াছি, কত আনন্দে দিন কাটাইয়াছি। ইহা বুঝিয়াছি যে তাঁহার সম্পর্কে কিছু লিখা আর না লিখা উভয়ই ভুল।



"শ্রীশ্রী ঠাকুরের সঙ্গে"
শ্রীতুলসীদাস গঙ্গোপাধ্যায়
শ্রীশ্রী রামঠাকুর আবির্ভাব শতবার্ষিকী স্মারকগ্রন্থ
পৃষ্ঠা: ১৭২

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন