শ্রীশ্রী ঠাকুরের হাস্যরস
শ্রীশ্রী ঠাকুর রসিক ছিলেন আবার কখনো বজ্র কঠিন ছিলেন। ফনীন্দ্র মালাকারও মাঝে মাঝে ঠাকুরের সাথে রসালাপ করতেন। প্রথম রসের ঘটনা ঠাকুরের বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে। ঠাকুর তখন শ্রীগুরু অনঙ্গ দেবের সাথে হিমালয় পরিভ্রমন সেরে ফিরে এসেছেন। আত্মীয়পরিজনরা ঠাকুরকে গৃহে বেঁধে রাখার জন্য গার্হস্থ্য জীবনে প্রবেশের চেষ্টায় বিয়ের ব্যবস্থা করতে উদগ্রীব হলেন।চারদিকে পাত্রী দেখা শুরু হল। রামঠাকুরকে অভিভাবকরা অনেক পাত্রীর সন্ধান দিলেন কিন্তু তিনি বিয়ে করতে রাজি নন। এর থেকে উত্তরণের জন্যই বোধ হয় ঠাকুর বললেন- পাত্রী পাওয়া গেছে। নিজেই জাঁকিয়ে বসলেন ভ্রাতুষ্পুত্রদের নিয়ে। তারপর অনেকক্ষণ পাত্রীর বর্ণনা, পাত্রীর পিতার বর্ণনা, কী করে বিয়ে হবে, কোলকাতা শহরে কী করে যাওয়া হবে এসব বলে যেন বেশ রোমাঞ্চ অনুভব করলেন। ভাইদের ছেলেমেয়েরাও আনন্দে অস্থির বিয়েতে যাওয়ার আনন্দে। সবাই আনন্দের ঘোরে রাতের নিদ্রায় শায়িত। কিন্তু একী সুখ স্বপ্নে অস্থির। পরদিন সকালে গৃহেতে আর শ্রীশ্রী ঠাকুরকে খুঁজে পাওয়া গেল না। এ এক অদ্ভূত করুন রস যা অত্যন্ত হৃদয় বিদারক। কিন্তু এটিই ছিল ঠাকুরের সংসার জীবন থেকে চিরমুক্তির রসোত্তীর্ণ ঘটনা।
ঠাকুরকে নিয়ে অনেক সময় রসিকতা করতেন ফনীন্দ্র মালাকার। একদিন অসময়ে ঠাকুরকে এসে ফনী ভাই জিগ্যেস করলেন- ঠাকুর আমলকী খাবা? তুমি ত আবার বন জঙ্গলের ফল মূল খাইতে ভালবাস।
ঠাকুর বললেন -যাও যাও লইয়া আস। আনলেই খামু।
যাই হোক ঠাকুর বলেছেন- আমলকী খাবেন। মালাকার বিলোনিয়ার পরিচিত পাহাড়ি জায়গায় বহু ঘোরাঘুরি করেও আমলকী পেলেন না। বিফল মনোরথ হয়ে বাড়ি ফিরে এসেছেন দেখেই ঠাকুর বলেছেন কী হইল আমলকী দেও? আনছনা আমলকী।
ফনীভাই বললেন- তুমি জান এখন আমলকীর সময় না। আমারে আগেই কইলে পারতা। তুমি পেটের ভিতরে সব কথা রাইখ্যা দাও। বরং একটা মা থাকলে সব জাইনা নিতাম।
ঠাকুর বললেন - একটা মা জোগার কইরা আন না।
ফনীভাই- তোমার বয়স আশি পার হইছে। তোমারে এখন মা দিব কেডা? এই জন্মে আর মা পাইতাম না।
ঠাকুর- একটা মা ত পাইতা। মাটা তৈরী হইছিল। আগে কইলে নিয়া আইতাম। রাজ পুতানায় থাকতে সেনি পরিবারের একমাত্র মেয়েরে আমারে দিতে চাইছিল। তোমার সাথে দেখা হইব তখন কি আর জানতাম আর তোমার যে মা লাগব এও কি জানতাম? আর কোটিপতি মা হইত, তোমার কোনো অসুবিধা হইত না। তবে অখন আর হইত না। কারণ আর সেই সুবিধা নাই।
যোগেশ্বর কর্মকার ঠাকুরের সাথে সাথে বহু জায়গায় যেতেন আর কীর্তনের সময় খোল বাজাতেন তাতে অন্যরা তাকে শ্রদ্ধা ভক্তি করত শুধু নয়, ঠাকুরও তাকে এটা সেটা দিতেন। কিন্তু ঠাকুরের প্রতি কোনো গভীর বিশ্বাস তার ছিল না। যেতেন কিছু পাওয়ার লোভে। একবার চট্টগ্রামের ফিরিঙ্গি বাজারে ঠাকুর আছেন বিধুভূষণ বোসের বাড়িতে। রাতে অনেক শিষ্যরা বসে আছেন। যোগেশ্বর বাবু সেখানে গিয়ে হাজির। ঠাকুর যেখানে বসেছিলেন সেখানে গিয়ে ঠাকুরের দু-পা জড়িয়ে ধরে এনে নিজের কপালে ঠেকালেন।
ঠাকুর বললেন - আহা ভক্তি দেখাইয়া এত নমস্কার করতাছেন। এদিকে ত মনে মনে আমারে লইয়া অকুল সাগরে ভাইস্যা বেড়াইতেছেন।
অন্যান্য আশ্রিত ও ভক্তরাও একথা শুনে আশ্চর্য হয়ে গেল। ঠাকুর এসব কী বলছেন! ঠাকুরের মুখের দিকে আবার তিনি তাকালেন। ঠাকুর আবার বললেন- মূর্খরা টাকা বাজাইয়া লয়না। নাইলে ধরা পড়লে পুলিশে যাইব এই ডরে চালাকরা টাকা বাজাইয়া লয়। বলতে বলতেই ঠাকুর হেসে উঠলেন। তারপর বললেন- নেন নেন আর বাজান লাগত না। আর মনের সাথে যুদ্ধ করতে হইব না। ঠাকুরকে প্রনাম করে যোগেশ্বর কর্মকার ফিরে এলেন।
পরমেষ্ঠী গুরু শ্রীশ্রী রামঠাকুর
ডঃ প্রশান্ত কুমার ভট্টাচার্য
পৃষ্ঠা: ৪৪৪
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন