শুক্রবার, ১৪ আগস্ট, ২০১৫



গুরু কৃপা- একটি কাহিনী

[মাইজদী স্থিত জন্মোত্সব মন্দির থেকে প্রকাশিত শ্রীঠাকুরের ১২৫ তম শুভ আবির্ভাব তিথি স্মরণে এই কাহিনীটি মুদ্রিত হয়েছিল, হুবহু তাই প্রকাশ করা হলো।]
১৯৮১ সন। যাদবপুর কৈবল্যধাম প্রাঙ্গন।পশ্চিমবঙ্গ। নাম গ্রহণ অনুষ্ঠান। ভক্তবৃন্দের প্রচুর ভিড়। একে একে নাম গ্রহণ করে সানন্দে ভক্তবৃন্দ ঘরে ফিরে গেল। কিন্তু সর্বালঙ্কারে বিভূষিত চারুলোচনা এক মহিলা মন্দিরের এক কোনে প্রথম থেকেই অপেক্ষা করছিলেন। সবাই ঘরে ফিরল কিন্তু মহিলাটির মধ্যে সে তাগিদও অনুভূত হল না। মহারাজ (চতুর্থ মোহন্ত মহারাজ শ্রীমত ভবতোষ বন্দ্যোপাধ্যায়) ব্যাপারটি লক্ষ্য করেছিলেন। আসন ত্যাগ করে মহারাজ উঠলেন স্বস্থানে ফিরে যাওয়ার জন্য। এমন সময় মহিলা এসে বললেন- বাবা, আমি আপনার কাছে কিছু কথা বলবো। শুনতে হবে। মহারাজ অভয় দিলেন। মহিলা তাঁর নিবেদন করলেন:
পাশাপাশি দু'টি গ্রাম। মাঝে ছোট একটি নদী। ওপারের গ্রামে রামসাধু এসেছেন। খবরটি বাতাসের আগে চারদিকে প্রচারিত হল। আমার শাশুড়ি দীর্ঘ দিন থেকেই ঠাকুরকে দেখা এবং ঠাকুরের কাছ থেকে নাম গ্রহণ করার জন্য আকুল আগ্রহে অপেক্ষা করছিলেন। কিন্তু এবার সে সুযোগ পেয়েও তিনি বুঝি বঞ্চিত হবে। দারিদ্রই একমাত্র প্রতিবন্ধকতা। পরনে ছেঁড়া কাপড়। আর্থিক অসচ্ছ্বলতা। দিন আনে দিন খায়। কিন্তু নাম গ্রহনের চিন্তায় কাজে মন বসে না। প্রতিবেশীরা সবাই ঠাকুর দর্শনে ওপারে যায়। অপসৃয়মান দর্শনার্থী ভক্তদের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে শাশুড়ি চোখের জল ফেলেন। খেয়াপারের পয়সাটি পর্যন্ত তাঁর কাছে নেই।
এক অপরাহ্ন। ঐ নদীর তীর। দর্শনার্থী লোকজন দেখল কৃষ্ণকায় শান্ত সৌম্য এক প্রৌঢ় ব্রাহ্মন এপারের খেয়াঘাটে নামলেন। এগিয়ে চললেন সামনের দিকে। মাঝিকে সবাই জিজ্ঞেস করলো-ব্রাহ্মনটি কে?
মাঝি-শুনেছি রামসাধু।
আর যায় কোথায়! ভক্তবৃন্দ সাধুর পেছনে ছুটলো। সাধু বাবা এলেন আমাদের উঠোনে। আমার শাশুড়িকে ডেকে বললেন- মা, আমি নাম দিতে এসেছি। নাম গ্রহণ করুন। ছিন্নবসনা আমার শাশুড়ি, আটপৌরে পোশাকে দয়াল ঠাকুরের সামনে যেতে ইতস্ততঃ করছিলেন। ঠাকুর ঐ অবস্থাতেই নাম গ্রহণ করার জন্য আহ্বান জানালেন। শাশুড়ি ভক্তিভরে মন্ত্র গ্রহণ করলেন। ঠাকুর ফিরে যাচ্ছিলেন। এমন সময় আমার শাশুড়ি করে বসলেন এক কাণ্ড। তিনি হঠাত করে ঠাকুরের শ্রীচরণ জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বললেন- বাবা, এক বছর আগে আমার তিন বছরের একটি ছেলে মারা গেছে। আমাকে যখন এতই অনুগ্রহ করলেন, আমার সে ছেলেটিকেও আজ আমাকে ফিরিয়ে দিন। ঠাকুর তো অবাক! বলে কি! এ কি করে সম্ভব। কিন্তু কোন কথাতেই শাশুড়ি ঠাকুরের শ্রীচরণ ছেড়ে দিতে রাজি হলেন না। একটি মাত্র শর্ত। আমার ছেলেকে ফিরিয়ে দিন। ঠাকুর ক্ষনিকের জন্য যেন চিন্তা করলেন। তারপর শাশুড়িকে অভয় বাণী দিয়ে সেখানেই ধ্যানস্থ হলেন। দশনার্থী ভক্তবৃন্দ বাড়িময়। কিছুক্ষণ পর ঠাকুর বললেন- মা, অচিরেই তোমার হারানো ছেলে তোমার গর্ভে ফিরে আসবে। ঠাকুর স্বস্থানে ফিরে গেলেন। তিন বছর পর আমার শাশুড়ি হলেন সন্তানসম্ভবা। নির্দিষ্ট সময়ান্তে মায়ের কোল জুড়ে এলো একটি শিশু সন্তান। মুখে যেন তার স্বর্গীয় সুষমা। সেই চেহারা। সেই কান্তি। পার্থক্য কোথাও নেই। পূর্বের মৃত সন্তানই শাশুড়ির ঘর আলোকিত করে এলো।
আমি সেই পুত্রেরই বধূ। আজ আমাদের সব আছে। সব হয়েছে। আশির্বাদ করবেন আমরা যেন ঠাকুরের শ্রীচরণে আশ্রিত থাকি।
ঠাকুর প্রসঙ্গে এই ঘটনাটি আমাদের কাছে প্রকাশ করে মহারাজ বলেন- আমি এমনই দুর্ভাগা যে, মহিলাটির ঠিকানা পর্যন্ত জিজ্ঞেস করতে ভুলে গেছি।
যেই জন মনে প্রাণে ভজে রাম রাম।
ঘরে বসে পায় সে শ্রী কৈবল্যধাম।।

স্মরনিকা
চতুর্থ মহারাজ শ্রীমত ভবতোষ বন্দ্যোপাধ্যায়- এর প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য
পৃষ্ঠা: ৭

 "ঠাকুর মানুষী তনুকে আশ্রয় করিয়া দ্বারে দ্বারে ঘুরিয়া সত্যযুগ ধর্ম্ম প্রচার করিয়া প্রকট লীলা সংবরণ করিয়া নিকটে নিকটে হৃদয়ে হৃদয়ে প্রতি শ্বাসে প্রশ্বাসে "প্রানরূপে" বিরাজ করিতেছেন, ইহা ধ্রুব সত্য।
এখনও নিত্যলীলা করে গৌর রায়।
কোন কোন ভাগ্যবানে দেখিবারে পায়।। "
চতুর্থ মোহন্ত মহারাজ শ্রীমত ভবতোষ বন্দ্যোপাধ্যায়-এর ডায়েরি থেকে।

শ্যামদাকে প্রশ্ন করা হল সারা দিনরাত আশ্রমে কি করেন?
উত্তর:- সারাদিন কুত্তার মত নাম নিয়া পইড়া থাকি।

চতুর্থ মোহন্ত মহারাজের ডায়েরী থেকে।

 মহারাজকে দর্শন ও তাঁহার কুশল সংবাদ যাদবপুরের শ্রীধামে জানিতে গেলে একদিন তিনি বলিলেন, "শ্রীশ্রী ঠাকুরের চিত্রপটের শ্রীদেহে কোন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে চন্দন দ্বারা, 'সজ্জিত না' করাই উচিত, পরিবর্তে ফুলের মালা ব্যবহার করা সমীচীন।" তখন মনে প্রশ্ন জাগে আমি বিনীতভাবে মহারাজ জীউকে জিজ্ঞাসা করিলাম, "আমাদের বাসায় দয়াল ঠাকুরের যে শ্রীচরণ আছে, যাহাতে নিত্যপূজা করা কালীন যে চন্দনসহ তুলসীপত্র ও পুষ্পাদী অর্পণ করা হয় সেইক্ষেত্রে আমাদের কি করণীয়, যদি দয়া করিয়া একটু বলিয়া দেন তবে সার্থক প্রথায় পূজা করিতে পারি। উত্তরে মহারাজ বলিলেন, "চন্দনসহ তুলসীপত্র ও পুষ্পাদি শ্রীশ্রী ঠাকুরের শ্রীচরণে নিশ্চয়ই দিবা, কিন্তু পূজার অন্তে সেই চন্দন অবশ্যই মুছাইয়া দিবা, তাহা না করিলে ঠাকুরের অস্বস্তি বোধ হয়। তাই বইল্যা নিজ অঙ্গের পরিহিত বস্ত্রাদির দ্বারা কখনওই মুছাইও না। একটি ভিজা রুমাল দিয়া মুছাইয়া দিও।" ইহা শ্রবনে আমার মনের সকল সংশয় দূরীভূত হইল।
স্মরনিকা

চতুর্থ মহারাজ শ্রীমত ভবতোষ বন্দ্যোপাধ্যায়- এর প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য
"স্মৃতি তর্পণ"
শ্রীদূর্গাশংকর মুখোপাধ্যায় (শংকর)
পৃষ্ঠা: ৬৩

বুধবার, ১২ আগস্ট, ২০১৫


 ঠাকুরের সিগারেট খাওয়া

একবার ঠাকুরের ইচ্ছা হল সিগারেট খাওয়ার। একের পর এক সিগারেট ধরাচ্ছেন এবং খেয়ে চলেছেন। একটা শেষ হয় তো আরেকটা ধরান আর সিগারেটের খুব প্রশংসা করে চলেছেন। এটির ধোঁয়া গিলতে নেই। সিগারেটের ধোঁয়ায় দাঁত ভালো থাকে, মুখ পরিষ্কার থাকে এসব বলতে বলতে করে চলেছেন সিগারেট পান। এমন সময় এক গেরুয়া পরা সন্ন্যাসী শ্রীশ্রী ঠাকুরের সামনে এসে উপস্থিত। ঠাকুর সব্যস্তে সিগারেট নিভিয়ে গেরুয়াধারীকে বন্দনা করে প্রনাম করলেন। পরিবেষ্টিত শিষ্যরা বিস্ময়ে সব দেখছিল। ভাবছিল একী! ঠাকুর প্রনাম করছেন যাকে, তিনি কত কত বড় মহাপুরুষ? ততক্ষণে গেরুয়াধারী হাঁটতে শুরু করেছেন।

পরমেষ্ঠী গুরু শ্রীশ্রী রামঠাকুর
ডঃ প্রশান্ত কুমার ভট্টাচার্য
পৃষ্ঠা: ২২৪



উল্টোরথের দিনে ঠাকুরের খেয়াল হল সেদিন গাছ কিনতে হয়। তাই ডাঃ দাসগুপ্তকে নিয়ে শ্রীশ্রী ঠাকুর ডাক্তারের গাড়িতে গিয়ে চরে বসলেন। পেছনের সিটে ঠাকুর এবং ডাঃ দাসগুপ্তের সহধর্মিনী মানসনলিনী দেবী। সামনের সিটে ড্রাইভার এবং ডাক্তার দাশগুপ্ত। মৌলালী ছাড়িয়ে যেতেই তীব্র শব্দে ছিড়ে পড়ল ট্রাম লাইনের ইলেকট্রিকের তার। তখন বেশ ভালো বৃষ্টি হচ্ছে, আকাশে বিদ্যুত চমকাচ্ছে, বাইরে ঝড়ো হাওয়া বইছে। বজ্রপাতেই ট্রামের তার ছিড়েছে এটা নিশ্চিত। ডাঃ দাসগুপ্তের গাড়ির চারদিক দিয়ে এই ইলেকট্রিকের তার ঘিরে পড়ল। রাস্তা ও দোকানের লোকগুলি হায় হায় করতে থাকল এই বুঝি তাদের মৃত্যু হয়। গাড়িটি পুড়ে যায়। বহু লোক সাহায্যের জন্য এগিয়ে এলেও কারেন্টের ভয়ে কেউ সামনে আসছে না। কিন্তু একি ভগবানের অপার লীলা। কোত্থেকে একটি কালো কুচকুচে সাত আট বছরের শিশু ছুটে এলো গাড়ির কাছে। তার মাথা ভর্তি কালো চুল, উজ্জ্বল দুটি চোখ। ছেলেটি এসে তারটি খুলে দিল। কিন্তু তার গায়ে ও হাতে বিদ্যুতের তারে কিছুই হল না। সে হাসি মুখেই কাজটি করল। তারপর একটি ছেলে ছোট্ট একটি চারাগাছ নিয়ে ডাক্তারবাবুর কাছে এসে জিগ্যেস করল- উল্টোরথে গাছ কিনতে হয়। নেবেন এই গাছটি? ঠাকুর বললেন- ডাক্তারবাবু গাছটি কিনে নিন। ছেলেটি কোথায় চলে গেল। গাড়ি চলেছে পার্ক সার্কাস এর দিকে। সামনের রাস্তার বরাবরে জায়গা অনেকটা ফাঁকা।
এতক্ষণ শ্রীশ্রী ঠাকুর গাড়ির পেছনের সিটে তন্ময় হয়েছিলেন। এবার অত্যন্ত আনন্দিতভাবে উজ্জ্বল মুখে শ্রীশ্রী ঠাকুর বললেন- "ডাক্তার বাবু আমাদের যে বিপদ থাইক্যা বাচাইছে ছেলেটি কে চিনতে পারছেন?"
ডাক্তারবাবু উত্তর দিলেন- না ঠাকুর চিনতে তো পারিনি।
ঠাকুর বললেন- জানেন ইনি বিপদে মধুসূদন। এই বালকটিই শ্রী মধুসূদন।
ঠাকুর আবার জিগ্যেস করলেন -'বলেন ত গাছটি আপনারে কে দিল?'
ডাক্তার বাবু পেছন ফিরে ঠাকুরের দিকে তাকালেন চোখে অপার জিজ্ঞাসা নিয়ে। যেন বলতে চাইছেন-ঠাকুর আপনিই জানেন।
ঠাকুর আবার বললেন- তিনই আপনার গোপাল। বড় হইলেই তিনি হন গোবিন্দ।
ঠাকুর ডাক্তারবাবুকে মন্ত্র দিয়েছিলেন- 'গোপাল গোবিন্দ রাম শ্রী মধুসূদন।'

মঙ্গলবার, ১১ আগস্ট, ২০১৫


ঠাকুরমশাই চৌমুহনীর বাংলোতেই আছেন। বাবা একদিন সিগারেট খেতে খেতে বাংলোতে আসছিলেন, গাঙ্গুলী মাসিমা ঐ প্রধান ফটকের সামনেই দাঁড়িয়েছিলেন।বাবাকে ঐ ভাবে সিগারেট হাতে আসতে দেখে তিনি খুব নিচু স্বরে বাবাকে বলেছিলেন, "উপেনদা, ঠাকুরমশাই বাংলোতে আছেন, আর আপনি কিনা সিগারেট খেতে খেতে ঠাকুরমশাইয়ের সঙ্গে দেখা করতে এলেন?" এই কথা শোনা মাত্র বাবা হাত থেকে সিগারেট ফেলে দিলেন এবং দুই গুরু ভ্রাতা-ভগিনী ঠাকুরমশাইয়ের সঙ্গে দেখা করতে বাংলোর ভিতরে এলেন। কিন্তু কোথায় ঠাকুরমশাই? কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজির পর দেখা গেল ঠাকুরমশাই বাগানে বসে কি যেন করছেন। গাঙ্গুলী মাসিমা ডেকে জিজ্ঞেস করলেন, এই সন্ধ্যাবেলা বাগানে বসে কি করছেন? ভক্তবত্সল শ্রীশ্রী রামঠাকুরের উত্তর- "উপেনবাবু তামাক খেতে বড় ভালবাসেন, তাই একটা তামাক গাছ লাগাচ্ছি।"

কিছু কথা
"শবরী"
শ্রীমতী রঞ্জু সাহা
ঠাকুর বলিলেন, "এক গুরুর শিষ্য ছিল। সেই শিষ্য প্রত্যহ সকালে স্নান করিয়া তাহার গুরুর পূজা ও ভোগ দিত। পূজা ও ভোগ না দিয়া সে কিছুই খাইত না।"
আমি বলিলাম, "ঠাকুরমশায়, কান ঘুরাইয়া নাক না দেখাইয়া সোজাসুজি বলিলেই হয়, আমারও কি তাহাই করিতে হইবে?" তিনি মাথা নাড়িয়া বলিলেন, "হাঁ।" আমি বলিলাম,"কি ভোগ দিব? সকালে খাই চা, কখনও ডিমের অমলেট, কখনও বা চপ কাটলেট।" ঠাকুর বলিলেন, "আপনি সকালে যাহা খান তাহাই ভোগ দিবেন।"

শ্রীগুরু শ্রীশ্রী রামঠাকুর
শ্রীরোহিনী কুমার মজুমদার
পৃষ্ঠা: ১৬৭

শ্রী অখিল রায় গিয়েছিলেন ভোলাগিরি মহারাজের কাছে দীক্ষা গ্রহণ করতে। তখন ভোলাগিরি মহারাজ অবস্থান করছেন সীতাকুন্ডে। সেখানে গিয়ে পৌঁছাতে অখিল বাবুর দুপুর গড়িয়ে গেছে। তিনি প্রনতি জানিয়ে শিষ্যদেরকে বললেন তার মনের কথা। শিষ্যরা আপ্যায়ন করে তাঁকে বসালেন, বললেন- ঠাকুর এই মাত্র ভোগ গ্রহণ করে বিশ্রাম ঘরে অবস্থান করছেন। নিদ্রা ভঙ্গ হলেই তাঁকে খবর দেওয়া হবে। অধীর আগ্রহে ঠাকুরের দীক্ষা পাবার জন্য অপেক্ষায় রইলেন শ্রী অখিল রায়। একসময় ভোলাগিরি মহারাজের নিদ্রা ভঙ্গ হল। খবর পেয়ে মহারাজ ডাকলেন অখিল রায়কে। বললেন-বেটা, তুম ক্যা মাংতে হো?
অখিল রায় বললেন- মহারাজ, আমি মন্ত্র চাই। আপনি আমাকে মন্ত্র দিন।
মহারাজ উত্তরে বললেন- বেটা, হমারে পাস তুমহারা লিয়ে মন্ত্র নেহী হ্যায়। রাম আতে হ্যায়, রাম তুমকো মন্ত্র দেংগে।
অখিলবাবু জিগ্যেস করলেন- তিনি কখন আসবেন?
মহারাজ জবাব দিলেন, বেটা তুমকো ঢুণ্ডনেকী জরুরত নেহি হোংগী, রাম হী তুমকো ঢুণ্ডলেংগে। তুম জানতে হো- বহ(উহ) কৌন হাঁয়? বহ(উহ) জগতকে দাঁড়ী হায়। বহ (উহ) দাঁড় ছোড়দে তো হমলোগ পঁহুচ নহি সকেংগে। দেবদেবী ভী উনকী সাহারে কে বিনা পঁহুচ নহী সকতে।
যার দিব্যদৃষ্টি আছে, তিনি সক্ষম হয়েছেন শ্রীশ্রী রামঠাকুরের স্বরূপ দর্শনে। এ ঘটনার কিছু দিন পরেই অখিল রায় লাভ করেন ঠাকুরের কৃপা।


শ্রীশ্রী জয়ন্তী মা

 শ্রীশ্রী ঠাকুর কথা প্রসঙ্গে এবং তাঁহার পত্রে আমাদিগকে জানাইয়াছিলেন যে, শ্রীশ্রীজয়ন্তীমা পাহাড়তলী কৈবল্যধাম আশ্রম রক্ষা করিতেছেন।
তিনি যে বস্ত্ততঃ কে, তাহা আমরা জানি না। তবে তাঁহার পত্র হইতে এবং তাঁহার সম্বন্ধে যাহা কিছু শোনা গিয়াছে, তাহা হইতে অনুমান হয় যে তিনি জগৎজননী মহাশক্তির সহিত অভিন্নতা লাভ করিয়া এখন সিদ্ধ দেহে, লোক নেত্রের অগোচরে জগৎকল্যানের মহাব্রতে ব্রতী আছেন। তিনি কৈবল্যধামের অধিষ্ঠাত্রীরূপা বলিলেও অত্যুক্তি হয় না। উক্তধাম প্রতিষ্ঠার বহুপুর্ব্ব হইতে তিনি পৃথিবীর নানা দুর্গম স্থান হইতে অলৌকিক হইয়াও লৌকিক উপায়ে ভাবাবেশে যে সকল পত্র পাঠাইয়াছেন, ঐ সকল পত্র হইতে জানা যায় যে মার বহু সেবকবৃন্দ সম্ভবতঃ তাঁহারই ন্যায় সিদ্ধ দেহে ছদ্মবেশ ধারণপূর্বক পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিচরণ করিতেছেন।
সুক্ষ্মদেহধারিনী শ্রীশ্রীজয়ন্তীমার "বিচ্ছেদানল' নামক চিঠি "লিওপুল" "এন্টার্কটিকা" দক্ষিন মেরু (কুমেরু) হইতে ১২/৭/২১ ইং তারিখে লিখিত হইয়া,U.S.A. Philadelphia তে Posted হইয়া পাহাড়তলী আশ্রম প্রতিষ্ঠার ১০ বত্সর পূর্ব্বে পাহাড়তলী Loco Office-এ Car. Supt. এর নামে পৌঁছায়। ইহা ঐ পত্রের কভারের উপরের পোষ্টেল সিল (Seal) হইতে স্পষ্টই প্রতীয়মান হয়।


শ্রীশ্রীঠাকুর রামচন্দ্রদেবের স্মৃতি অর্চ্চনা
শ্রীশুভময় দত্ত
পৃষ্ঠা: ৭২

রবিবার, ৯ আগস্ট, ২০১৫


ঠাকুরমশাই যখন চৌমুহনীর বাড়িতে আসতেন তখন সাদা ধবধবে চাদর পাতা একটা খাটের উপর বসতেন, আর ভক্তমন্ডলি রঙ্গিন শতরঞ্চি পেতে নিচে বসতেন। ভক্তরা তাঁদের প্রিয় খাবার ও ফল ঠাকুরমশায়ের জন্য আনতেন। আমি ও ছোট ভাই বাচ্চু দরজার পাশে দাঁড়িয়ে দেখতাম।যখন কোন লোভনীয় ফল দেখতে পেতাম, আমরা ঠাকুরমশায়ের কাছে গিয়ে টুক করে প্রনাম করে হাত বাড়িয়ে দিতাম। ঠাকুর মশাইও হাসিমুখে নির্দিষ্ট ফল আমাদের হাতে তুলে দিতেন। একদিন বাবা ভেতর বাড়িতে এসে মাকে বললেন, "ভক্তরা কত আশা করে ঠাকুরমশায়ের জন্য ফল মিষ্টি নিয়ে আসেন, তিনি যদি একটু দয়া করে গ্রহণ করেন। কিন্তু ঠাকুরমশায় তা গ্রহণ না করে আমার ছেলেমেয়ের হাতে তুলে দিচ্ছেন। এতে তারা মনে কষ্ট পায়।" এই বলে একটি টেবিলের পায়ার সঙ্গে আমাকে ও বাচ্চুকে গামছা দিয়ে বেঁধে রাখলেন। বাইরে বাড়িতে বসা ভক্তরা কেউই কিছু টের পেলেন না। কিছুক্ষণ পর বাবা ভালো মানুষের মত ঠাকুরমশায়ের কাছে গিয়ে বসতেই তিনি বলে উঠলেন, "ওদের বাইন্ধ্যা রাখছেন ক্যান, ওদের ছাইরা দেন, ওরা খাইলেই আমার খাওয়া হয়।"
কিছু কথা
"শবরী"
শ্রীমতী রঞ্জু সাহা
শ্রীজীবন ঠাকুর রচিত ''প্রচ্ছন্নের আত্মপ্রকাশ শ্রীশ্রী রামঠাকুর" গ্রন্থ থেকে নিম্ন অংশ উদ্ধৃত।

শ্রীশ্রী ঠাকুরের প্রকট লীলা সম্বরণ করার পূর্ব পর্যন্ত আজীবন সঙ্গপ্রাপ্ত নব্বই বছরের বৃদ্ধ বন্ধুপ্রবর শ্রীযুক্ত হীরালাল রায়ের সযত্ন রক্ষিত পান্ডুলিপি হইতে গৃহীত কাহিনীটি নিম্নরূপ:
"চৌমুহনীতে উপেনদার গৃহপ্রাঙ্গনে একটি কদম্ব তরু বিরাজিত। একদিন কোন পুন্যক্ষণে ঠাকুর আশ্রম হইতে আসিয়া ঐ কদম্ব মূলে দাঁড়াইলেন। বাসাবাড়ির পশ্চিম প্রান্তস্থিত শয়ন কক্ষ হইতে উপেনদা ঠাকুরকে দর্শন করিয়া অনতিবিলম্বে আসিয়া প্রনাম করিলেন। মস্তিষ্ক উত্থিত করিয়া শ্রীদেহ নিরীক্ষণ করিতে দৃষ্টিপাত করিলে বিস্মিত নেত্রে অবলোকন করিলেন- শ্রীশ্রী ঠাকুর চতুর্ভুজ মূর্তিতে শঙ্খ, চক্র, গদা, পদ্ম হাতে তাঁহার সম্মুখে দন্ডায়মান।"

ঠাকুরমশাই চৌমুহনীর বাড়িতে আছেন। বহু লোক ঠাকুর মশাইয়ের কাছে 'নাম' পাওয়ার জন্য এসেছেন। যথাসময়ে 'নাম' পাওয়ার পর ঠাকুরমশাই সবাইকে বললেন, আপনারা উপেনবাবুর বাড়িতেই প্রসাদ পেয়ে যাবেন। নামপ্রার্থীদের মধ্যে একজন ব্রাহ্মন দম্পতি ছিলেন। তাঁরা রান্নাঘরে গিয়ে দেখেন কোন ব্রাহ্মন ঠাকুরকে দিয়ে রান্না করানোর পরিবর্তে আমার মা নিজেই ভক্তদের জন্য রান্না করছেন। এতে তাঁরা খুব অস্বস্তিতে পড়লেন। ব্রাহ্মন হয়ে সাহার হাতের রান্না খাবেন? কিছুক্ষণ পর মাকে বললেন, একটা স্টোভ দিতে, ওনাদের রান্না ওনারা নিজেরাই করে নেবেন। মা স্টোভ দিতেই ওনারা সবে মাত্র ভাতের হাঁড়ি চাপাতে উদ্যত হয়েছেন এমন সময় ঠাকুরমশাই রান্নাঘরে এসে দুই হাত প্রসারিত করে রান্নাঘরের দরজার দুপাশের পাল্লায় হাত রেখে বললেন, এখানে যাই খাবেন, সবই প্রসাদ, এমন কি মাছ মাংস খেলে সেটাও প্রসাদ। এরপর ব্রাহ্মন দম্পতির অবস্থা সহজেই অনুমেয়। [এই ঘটনাটি আমার বড় ভাই শ্রীবিমলেন্দু বিকাশ সাহার কাছে থেকে সংগৃহীত।]

কিছু কথা
"শবরী"
শ্রীমতী রঞ্জু সাহা

শ্রীশ্রী ঠাকুর ভক্তপ্রবর অতুলচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের স্ত্রীকে বলেছিলেন, "মা, আমি শিব হইতে আসি নাই। আইছি আপনাগো সেবা করতে।"
শ্রদ্ধেয় কুঞ্জলাল মজুমদারের স্ত্রী কিরনবালা মজুমদারকে ঠাকুর বললেন - "মা, লোকের সেবা হইলেই হইল। আর কোন প্রয়োজন হয় না।"

শনিবার, ৮ আগস্ট, ২০১৫


ঠাকুর একবার আমাকে উপদেশ ছলে বলেছিলেন, 'মায়ের আশীর্বাদে সন্তানের মঙ্গল হয়।' এই আদেশ বাণী শোনার পর আমার মা যতদিন জীবিত ছিলেন, ততদিন পর্যন্ত বাইরে যাবার সময় মাকে প্রদক্ষিন ও প্রনাম করে বাইরে যেতাম। মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে আমি মানসিক শান্তিলাভ করেছিলাম। এ বিশ্বাস আমার মনে দৃঢ় হয়ে আছে যে, কোন সন্তান যদি মায়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয় এবং মায়ের স্নেহ ভালবাসা পরিপূর্ণরূপে লাভ করে, সে তার ইহজীবনে মানসিক শান্তিলাভ করবেই। শ্রীশ্রী ঠাকুরও তাঁর মায়ের প্রতি খুবই শ্রদ্ধাশীল ও কর্তব্যপরায়ণ ছিলেন। স্বহস্তে মায়ের সেবা করতেন। ঠাকুর একবার আমার মা'কে বলেছিলেন,- 'আপনার প্রসাদ মনোরঞ্জনের জন্য রাইখা দিবেন। মা'র প্রসাদে সন্তানের আয়ুঃ বৃদ্ধি হয়।'

কৃপাসিন্ধু রামঠাকুর
শ্রী মনোরঞ্জন মুখোপাধ্যায়
পৃষ্ঠা: ১৩


দেবতারা যাঁর সেবা করবার জন্য সতত উন্মুখ, সেই দেবসেব্য শ্রীশ্রী ঠাকুর ভক্তদের কিভাবে সেবা করেছেন- তাঁর মাধুর্যমন্ডিত লীলা দেখতে পাই 'শ্রুতিতে রামঠাকুর' গ্রন্থের ১ম খন্ডের ৫ম সংখ্যক কাহিনীতে। কলকাতার ঢাকুরিয়া নিবাসী পরম ভক্ত শ্রদ্ধেয় মতিলাল বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয় সকালে বাজারে যাচ্ছেন। এমন সময় শ্রীশ্রী ঠাকুর মতিবাবুকে আদেশ করলেন- বাজার থেকে যেন চিতলের পেটি ও বুক লাল কই মাছ আনা হয়। ঠাকুরের এই নির্দেশে মতিবাবু বিস্ময়ে হতবাক। ক্ষুধা-তৃষ্ণা রহিত শ্রীশ্রী ঠাকুরের হঠাত মাছের কী বা প্রয়োজন? কিন্তু গুরুবাক্য শিরোধার্য করে উক্ত দ্রব্যাদি মতিবাবু বাজার থেকে আনলেন। ঠাকুর উত্ফুল্ল চিত্তে মতিবাবুর সহধর্মিনীকে মাছ রান্নার পদ্ধতি বিশদভাবে বুঝিয়ে দিলেন। দীর্ঘদিন পর হঠাত ঐ দিনই বেলা ১২ টার সময় ডাঃ জে.এম দাশগুপ্ত এসে হাজির মতিবাবুর বাড়িতে। ঠাকুর তাঁকে এখানেই দ্বিপ্রাহরিক আহার করতে বললেন। বাড়িতে খবর পাঠানোর জন্য ডাক্তারবাবু তাঁর ড্রাইভারকে পাঠালেন এবং ঠাকুরের নির্দেশ মতো ফেরার পথে দুই প্যাকেট সিগারেট আনতে বললেন। এদিকে ডাক্তারবাবু স্নানের জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন। শ্রীশ্রী ঠাকুর মতিবাবুর সহধর্মিনীর কাছ থেকে তেল এনে ডাক্তারবাবুর মাথায় ঘষছেন। ঠাকুরের এই আচরণে ডাক্তারবাবু খুব অস্বস্তি বোধ করছেন। ভক্তবত্সল ঠাকুরের ভক্তসেবা এখানেই থেমে রইল না। ডাক্তারবাবুর স্নানের জন্য এক বালতি জল টিউবওয়েল পাম্প করে তুলে রেখেছেন। ডাক্তারবাবু তো মহাবিপদে পড়লেন। স্বয়ং ভগবানের আনা জলে ভক্ত স্নান করবেন-এটা কখনো সম্ভবপর? অবশেষে ডাক্তারবাবুর অনেক অনুরোধে ঠাকুরকে এ কাজ থেকে নিরস্ত করা গেল এবং ডাক্তারবাবুর স্নান সম্পন্ন হল।

কিছুক্ষণ পর ভক্তপ্রবর প্রভাতচন্দ্র চক্রবর্তী মহাশয় উপস্থিত হলে ঠাকুর তাঁকেও স্নান করিয়ে দুপুরে খাওয়ার জন্য ব্যস্ত হয়ে উঠলেন। ডাক্তারবাবু ঠাকুরকে নিবৃত্ত করে প্রভাতবাবুকে স্নান করিয়ে আনলেন। স্নান সমাপনান্তে দুই ভক্ত বসেছেন দ্বিপ্রাহরিক আহারে। ঠাকুর একটি মোড়ায় বসে তাদের আহারের তদারকি করছেন। ভক্তসেবার পরবর্তী নিদর্শন আরও চমকপ্রদ। ডাক্তারবাবুর ধূমপানের নেশা না থাকলেও, প্রভাতবাবুর ধূমপান করার অভ্যাস ছিল। তাই প্রভাতবাবু অনতিদূরে একটি গাছতলায় বসে বেশ আয়েশ করে সিগারেটে সুখটান দেবার জন্য পকেটে হাত দিয়ে দেখেন যে তাঁর পকেটে সিগারেট নেই। সেই সময় ডাক্তারবাবু দু'প্যাকেট সিগারেট এনে প্রভাতবাবুর হাতে দিয়ে বললেন- এই ধূমপানের ব্যবস্থা ঠাকুর স্বয়ং করেছেন। ভক্তসেবা এখানেই শেষ নয়। দ্বিপ্রাহরিক বিশ্রামের জন্য ঠাকুর নিজ হাতে অনেক যত্ন করে শয্যার ব্যবস্থা করেছেন। মা যেমন তাঁর সন্তানের প্রতি অপত্য স্নেহ ভালবাসায় তার সেবা করেন শ্রীশ্রী ঠাকুরের সেই প্রকার মাতৃবত আচরণে ভক্তদের নয়ন অশ্রুপূর্ণ হয়ে উঠল।


Baba (Neem Karoli Baba) used to talk about the saints and how they move about. One day he said, "Ram Thakur was a great saint, a very great saint." I had not heard about him as I also had not heard about many others. Afterwards I read and heard about him from some of his devotees. He took his samadhi in 1949. He was a great saint, and many of his devotees both high and low remember him, not as a saint, but actually Bhagwan—God. There was so much in common between him and Babaji. They had the same methods of working, unseen and unknown by others.
I do not know why Babaji talked so much about Ram Thakur. Babaji would not disclose anything about himself to satisfy my curiosity, but I could seek some help, some light, from the lives of other saints. Perhaps Ram Thakur was chosen for me for that purpose. Their ways of working were very similar in many things, and the similarity of their behavior in identical situations was very striking.
Professor Chakravarty was a great devotee of Thakur. One day he was sitting with his friends in a room on the ground floor when they saw Thakur suddenly go up the stairs. They went up and saw that the Professor's wife was very agitated. She asked where Thakur had gone. She had been feeling totally helpless in alleviating the suffering of her three children who were sick from smallpox. She had been appealing to Thakur, so Thakur had to come. Seeing him at the door, she went to get a seat for him, but when she returned, he was gone. They had all seen him come, but he was not there anymore. In three days all the children recovered, with no trace or mark of the disease on their bodies. They learned afterwards that when they had seen Thakur in their Calcutta house, he was actually sitting in Hardwar, surrounded by his devotees.
Neither Ram Thakur nor Babaji would talk about themselves, or allow others to talk about them. If you had questions, you had to work them out for yourself. There were no ready-made answers to your queries, no capsule to swallow, no open book to glance at. It was only after his samadhi in 1949 that Thakur's devotees were able to write about their guru.
Dr. Das Gupta was a well-known doctor in Calcutta and known by Thakur's devotees as 'Doctor Dada.' He never missed an opportunity to be with Thakur when he was nearby. One day, while driving his car, he saw Thakur on the road. He stopped and asked when he had arrived in Calcutta and where he was staying. Thakur did not reply to the questions. Instead he said, "Everyone knows that Duryodhan was a very wicked person. He had one hundred brothers. You may read the whole of the Mahabharata but you will not find anywhere that he had any quarrel with his brothers or that he did not love them."
His words had their effect. The Doctor thrust his hand into the car, picked up a file of papers, tore them up and threw them away. When he looked up, Thakur was gone. The Doctor had been on his way to the High Court, where he was fighting a case against his brothers about his share in the family property. Inquiring later, he learned that Thakur had been in Simla for the whole week and had not gone anywhere.
– Excerpt from "The Near and the Dear" by Dada Mukerjee

শুক্রবার, ৭ আগস্ট, ২০১৫



বেদবানী/Veda-Vani  

"নাম প্রাণে করে। ঘুমাইলে জীবের নাম হয়, সেই নাম জাগরণে বিলুপ্ত হইয়া বহু অংশে নানান আখ্যা ধারণ করিয়া নানান রূপে রসে আকৃষ্ট থাকায় নাম যে সর্ব্বদা হয় তাহা জানিতে না পারিয়া প্রকৃতির গুনের দ্বারায় মন বুদ্ধির বৈগুন্যতা দ্বারা নানান বাসনা করিয়া বন্দী হইয়া পড়ে। তাতেই নানান উপাধি মণ্ডিত হইয়া ভাগ্যবশে সুখদুঃখ জন্মমৃত্যু এড়াইতে পারে না। অতএব ধৈর্য্য ধরিয়া প্রানের নিকট থাকিবেন, তবেই নাম শুনিতে পারিবেন।"
বেদবানী: ২/১৭

"The living God in man functions as the Name undisturbed during deep sleep, obscurely in the waking state where it is variously split up and modified into alluring forms and tonalities. The result is ignorance of the everduring functional presence of the Name, mental and intellectual disharmonies as conditioned by the instinctive urges, and imprisonment in the cell of endless desires. Hence the assumption of various alien adjuncts which weave the web of Fate, offer pleasure and pain, and prevent escape from birth and death. Wherefore dwell perseveringly in the living God within you so as to realise His presence as the Name."
Veda-Vani: 2/17

"লোকের কথায় কি যায়? সত্যের আবরনই রজঃ তমঃ, একেই ম্লেচ্ছ অর্থাৎ ময়লা বলে। সত্য কখনও মলিন হয় না। যে যাহা বলুক, যে যাহা করুক সর্ব্বদাই সহিষ্ণুতাকে আশ্রয় করিয়া সহ্য করিয়া কেবল গুরু স্মরণ করিবে।"
বেদবানী: ৩/ ১৩৪

"If they say, let them say. Ignorance and the egoistic urges, which veil truth by their impurities are the real untouchables. Truth however can never be defiled- It is Holiness. Always cultivate patience and fortitude against what others say or do and thus try to live in constant recollection of the fact that the Guide resides in your heart as Truth,"
Veda-Vani: 3/134

"মিত্রভাব সর্ব্বদাই সর্ব্বভূতে ঈশ্বরের অস্তিত্ব দর্শন, ঈশ্বরকে ভালবাসা। সকলের মধ্যেই আত্মার মত অর্থাৎ আপন শরীরে যেমন সুখ-দুঃখ অনুভূতি হয়, তদ্রূপ পরদেহে আপন দেহের মত সুখ-দুঃখ বোধ করিতে পারিলে মিত্রভাব হয়। ইহাই প্রেম বলে, পরহিতে রত ইহাই মিত্রভাব। ইহা যদি স্থায়ী হয় তাতেই সর্ব্বদা মিত্রভাবে ভগবানকে পায়।"
বেদবানী: ২/১৩৬

"He that worships God as Friend looks upon all beings as interpenetrated by God, so that the joys and sorrows felt in other corporeal fields are experienced by him as if they were his own. This way does he cultivate the love of God and strengthen his friendly tie with Him by devoting himself to the service of others, This is Love Divine, which, when firm and steady, unfolds the enduring realisation of God as Friend."
Veda-Vani: 2/136


"জগতে পরিচয়ের বিভিন্নতা কিছু নাই, কারণ আত্মা, যাকে প্রাণ বলে, তিনি এক জানিবেন। দেহসকল প্রকৃতি বিভিন্নতায় রূপ রূপান্তর হয়, প্রকৃতির গুনের দ্বারায় পরিচালিত হয় মাত্র জানিবেন।"
বেদবানী: ৩/৬৬

"The complex of physical components varies from person to person, because they are assembled by Nature into various configurations and controlled by various groups of Nature's modes. Hence people go by different names. But they all refer to themselves as "I" -the one universal Self of all."
Veda-Vani: 3/66

"আপনার কার্য্যে অনুরাগ বৃদ্ধি সম্বন্ধেই গুরু বলিয়াছেন- অনুরাগী হইলে পতন হয় না। লেখা পড়া শিখিতে চেষ্টা রাখা ভালই ইহাতে সাধন ভজন নষ্ট হয় না।"
বেদবানী: ৪/১০৬

"নিত্য নৈমিত্তিক কর্ম্ম যাহা করিতে হইবে তাহা সকলই গুরুর উপর রাখিয়া যথা যথা সময় পাইবেন সেই অনুযায়ীই কার্য সম্পাদন করিতে চেষ্টা রাখিবেন। যখনকার যে কার্য্য তখনের জন্য তাহাতেই মনকে নিবেশ করিতে চেষ্টা করাই ধর্ম্ম। নিজের কর্ম্ম মনে না করিয়া গুরুর উদ্দেশ্যে কর্ম্ম করাই ধারণা। এই প্রকার করিতে করিতে সংসার বন্ধন ক্ষয় হয় অন্য কোন চিন্তা করিবেন না সকল ভার গুরুকে দিয়া ভ্রাতৃ আজ্ঞা পালনে যত্নশীল হউন।"
বেদবাণী: ৪/৬০

"কাঠের মালা গলায় দিলেই তুলসী ধারণ করা হয় না। বেদই পূজা করে। নাম করিবেন। নাম করিবেন। নাম করিলেই ধাম মুক্ত হইয়া যাইবে।"
বেদবানী: ৪/২৪







"মা ভক্তদের ধর্ম্মোপদেশ দিচ্ছিলেন এমন সময় ভক্তদের সাথে শ্রীশ্রী রাম ঠাকুরও মঞ্চে প্রবেশ করেন। ঠাকুরকে দেখে হঠাত করে মা বলতে শুরু করেন, "ঐ আমার বাবা আসছেন আপনারা সকলে বাবাকে প্রনাম করেন।" শত শত ভক্ত ঢুকছে আলাদা করে কে বাবা কারো বুঝবার উপায় ছিল না। সকলে মাকে প্রনাম করছে রামঠাকুরও মাকে প্রনাম করে হাত জোড় করে বসে আছে। ঠাকুরের আশ্রিতদেরও একই অবস্থা। ভক্তরা ঠাকুর কে জিজ্ঞাসা করলেন। আপনার থেকে বয়সে এত ছোট তাঁকে আপনি প্রনাম করলেন কেন? উত্তরে ঠাকুর বললেন আমি সাক্ষাৎ ভগবতীকে প্রনাম করেছি। মায়ের ভক্তরা মাকে প্রশ্ন করলেন ঠাকুর আপনাকে প্রনাম করেছে অথচ আপনি সকলকে হাত তুলে আশীর্ব্বাদ করেছেন ওনাকে আশীর্ব্বাদ করলেন না কেন? উত্তরে মা বললেন, ''আমি যে ওনার চরণেই পড়ে আছি।"


ছবিতে রামঠাকুর (২য় খণ্ড)
শ্রী মহানন্দ দাশ
পৃষ্ঠা: ৩২

বৃহস্পতিবার, ৬ আগস্ট, ২০১৫




প্রকৃত ভক্ত

ছৈয়দ খাঁ সাহেব খুব বড় লোক। যেমন তাঁর পয়সা কড়ি, সোনা মানিক, দাস দাসী, কোন কিছুর অভাব ছিল না। তেমন টাকা রোজগারের চেষ্টা বা ইচ্ছা কোনটাই ছিল না। এদিকে তিনি বাবা ঠাকুরদার জমান টাকা দু হাতে খরচ করে চলেছেন। লোকে বলে, এক সময় খারাপ বন্ধুদের সাথে মিশে তাঁর স্বভাব চরিত্র খুব খারাপ হয়ে যায়। খারাপ স্বভাবের জন্য খাঁ সাহেবের খরচের হাত আরও লম্বা হয়। একদিন তাঁর সমস্ত পয়সা কড়ি শেষ হয়।
'পেট চলবে কি ভাবে?' এই ভেবে, তিনি বাধ্য হয়ে চাকরি খুঁজতে শুরু করলেন। মনের ইচ্ছা, নিজে বড় লোকের ছেলে তাই মনের মত মনিব না পেলে কোথাও চাকরি করবেন না। এই ভাবনায়, তিনি অনেক চেষ্টা করেও মনের মত মনিব খুঁজে পান নি। চাকরিও জোটে না।
একদিন ছৈয়দ খাঁ সাহেব খবর পেলেন, তাঁর এক মেয়ে বন্ধুর বাড়ীতে নাচ গানের আসর বসবে, মনিব মেলে কিনা? তার খোঁজে তিনি গেলেন সেই বাড়ীতে। গিয়ে দেখেন খুব সুন্দর এক মানুষের ছবি সাজানো রয়েছে। ছবির সেই মানুষটিকে দেখেই তাঁর ভালো লেগে গেল। খাঁ সাহেব মনে মনে ভাবেন,' চাকরী যদি করতেই হয় তবে এই মানুষটির কাছেই চাকরী করব।' উপযুক্ত মনিব খুঁজে পেয়ে তিনি সেই গানের আসরে যাঁরা এসেছিলেন তাঁদের মাঝেই বলে উঠলেন, 'এতদিনে আমি মনের মত মনিব খুঁজে পেয়েছি। ওনার কাছেই চাকরি করব।' ছবির মানুষটিকে দেখিয়া জিজ্ঞাসা করলেন, 'এই ভদ্রলোকের নাম কি? কোথায় থাকেন?' ইত্যাদি অনেক কথা। আসরের প্রায় সবাই খাঁ সাহেবকে চেনেন। তাঁর কথা শুনে সবাই হো হো করে হাঁসতে শুরু করে দিলেন। আর মনে মনে ভাবতে লাগলেন, 'ছৈয়দ খাঁ সাহেবের মাথা নিশ্চয় খারাপ হয়েছে? তা না হলে কি কেউ এমন কথা বলে?' -যে মেয়ে বন্ধুর বাড়ীতে নাচ গানের আসর বসেছিল তিনি খাঁ সাহেবের মনের ভাব বুঝতে পেরে, বললেন, 'খাঁ সাহেব! ওনার নাম লালাজী, বৃন্দাবন ধামে বাড়ী। আপনি বৃন্দাবনে যান, সেখানে গেলেই তাঁর দর্শন মিলবে।'
বান্ধবীর কথামত ছৈয়দ খাঁ সাহেব ছুটলেন বৃন্দাবনের পথে। পথে যেতে পাছে মনিবের নাম লালাজী, ভুলে যান, তাই তাঁর নাম, মনে মনে আউড়ে চলেছেন। -এক সময় খাঁ সাহেব উপস্থিত হলেন লালাজীর দরজায়। গিয়ে দেখেন আর মনে ভাবেন, 'এ তো সাধারণ মানুষের বাড়ী নয়, এক সুন্দর মন্দির।' মন্দিরের ভিতরে না গিয়ে, তিনি মন্দিরের বাইরে দরজার এক পাশে বসে রইলেন। মনে মনে ভাবতে লাগলেন, 'হ্যা আমি এনারই চাকরী করবো। তবে এখন ভিতরে যাব না। উনি খুব বড় লোক। যখন বেড়াতে বের হবেন তখনই চাকরীর কথা বলবো।' এই ভেবে তিনি অপেক্ষা করতে লাগলেন। -দিন যায়, সন্ধ্যা নামে। আকাশের লালিমা কখন যে মুছে অন্ধকার নেমে আসে, তা তাঁর খেয়াল থাকে না। তিনি শুধু মালিকের আসার প্রহর গোনেন। - গভীর রাত, বাইরে কুকুর আর শেয়ালের ডাক ছাড়া আর কোন শব্দ নেই। এমন সময় ঝুম, ঝুম সুরেলা এক আওয়াজ তাঁর কানে এল। মনে হলো, আওয়াজটা মন্দিরের ভেতর থেকে আসছে। তিনি দরজার এক পাশে সরে দাঁড়ালেন। খানিকক্ষণ পরে, চাঁদের আবছা আলোতে দেখতে পেলেন, খুব সুন্দর এক পুরুষ মানুষ এক মহিলাকে সাথে নিয়ে মন্দির থেকে বেরিয়ে বাগানের দিকে চলেছেন। চাঁদের আলোয় মহিলার গয়না থেকে আলো ঠিকরে বার হচ্ছে। - তাঁদের বাগানের দিকে যেতে দেখে, খাঁ সাহেবও ওনাদের পিছু পিছু চলা শুরু করলেন।
বাগানে বেড়াতে বেড়াতে মহিলা বললেন, 'এত গয়নার বোঝা নিয়ে কি বেড়ান যায়? বোঝা বইতে কষ্ট হয়।' ‘তবে খুলে ফেল।' বললেন তাঁর সাথের সেই সুন্দর পুরুষ। মহিলা তখন তাঁর গায়ের গয়না একটা একটা করে খুলে মাটিতে রেখে দিলেন। খাঁ সাহেব সবই শুনেছেন, দেখেছেন। তিনি ভাবলেন, 'আমি তো এনাদের চাকর, সাথেই আছি। গয়না সামলে রাখব। সেই মনে করেই বোধ হয় এত দামি গয়না খুলে মাটিতে রেখেছেন। চাকর হিসাবে আমারই কুড়িয়ে সাবধানে রাখা কর্তব্য। ঘরে গিয়ে যখন চাইবেন তখনই দিয়ে দেব।' এই ভেবে ঐ সব গয়না কুড়িয়ে নিয়ে, আবার তাঁদের সাথে চলতে শুরু করে দিলেন।
শেষ রাতে তাঁরা যখন আবার মন্দিরে ফিরে আসছেন তখন ছৈয়দ খাঁ সাহেবের মনে হলো, 'আমি ইসলাম ধর্মের চর্চা করি। কি করে মন্দিরে গিয়ে এই সব গয়না মনিবকে বুঝিয়ে দেব? সুযোগ বুঝে যাঁর জিনিস তাঁকেই ফেরত দেবো।' এই ভেবে তিনি সমস্ত গয়না নিয়ে, আবার আগের মত দরজার পাশে বসে রইলেন।
এদিকে পরের দিন ভোরে লালাজীর সেবক লালাজীকে শয্যা থেকে ওঠাতে গিয়ে দেখেন রাধা মায়ের গায়ে কোন গয়না নেই। -মন্দিরের ভেতরে হৈ হৈ পড়ে গেল। রক্ষীরা তদন্ত করা শুরু করে দিলেন। তখনও কোনো কিনারা হয়নি। সকলেই অনুমান করলেন, রাধা মায়ের গয়না চুরি হয়েছে আর পাওয়া যাবে না। মন্দিরে তখনও গোলমাল চলছে।
-কিছুক্ষণ পর লালাজীর এক সেবক বাইরে আসতেই ছৈয়দ খাঁ সাহেব তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, 'ভাই! মন্দিরের ভেতর এত গন্ডগোল কেন?' শুনে সেই সেবক বললেন, 'রাধা মায়ের গয়না কে যেন চুরি করে নিয়েছে। তাই তদন্ত হচ্ছে।' 'না! না! কোন গয়না চুরি হয়নি।' বলে উঠেন খাঁ সাহেব। এই বলে তিনি কাল রাতের সমস্ত ঘটনা খুলে বলে, গয়নার পুটলি সেবকের হাতে তুলে দিলেন। এই কথা শুনে সবাই অবাক হয়ে গেলেন। মন্দির কতৃপক্ষ ছৈয়দ খাঁ সাহেবের সারা জীবনের জন্য ভোগ প্রসাদ পাওয়ার ও থাকার ব্যবস্থা করে দিলেন। এখনও বৃন্দাবনে ছৈয়দ খাঁর বাজার এই ঘটনার সাখ্য বহন করে চলেছে।
(শ্রীশ্রী রামঠাকুর কথা প্রসঙ্গে নানা গল্প বলতেন .ভক্তদের কেউ কেউ তা নিজের ভাষায় নোট করে রাখতেন। তরলা সুন্দরী গাঙ্গুলি তাঁদের অন্যতম। এই গল্পটি তাঁর লেখা খাতায় পাওয়া গল্প অবলম্বনে লেখা হয়েছে। লেখিকার উক্তি, 'প্রকৃত ভক্তের উক্ত কাহিনী বিবৃত করে শ্রীশ্রী ঠাকুর গান ধরলেন:
মধুসূদন রোদন মদন ভাতি
বাধব গোবিন্দ মাঝে হস্ত বিরাজিত
(সম্ভবত মাধব বা রাধা)
উদিত ভানু মুদিত তনু দিতেছে অঙ্গে
সদাগান গীত বিনন্দিত।
......গানটির সর্বসাধারণের বোধ্য ভাষা উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।' আকর গ্রন্থ শবরী)
উপদেশ: সম্ভবতঃ গল্পটির শেষে শ্রীশ্রী রামঠাকুর এই গানটি গেয়ে ছিলেন তখন কোন উপদেশ দেন নি। তবে সাধারণ মানুষ হিসাবে অনুমান করা যেতে পারে, প্রকৃত ভক্ত যেমন ভাবে ভগবানকে চান, ভগবান তাঁকে তেমন ভাবেই দেখা দেন। যেমন ছৈয়দ খাঁ সাহেব তাঁর মনিব হিসাবে লালাজীকে আকুল ভাবে চেয়েছিলেন। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ও রাধা মা তাঁকে তেমন ভাবেই দেখা দিয়েছিলেন। -মা যশোদা ভগবানকে পেয়েছিলেন পুত্র রূপে।ব্রজগোপীদের কেউ পেয়েছিলেন ননীচোরা রূপে বা নাড়ুগোপাল রূপে।পান্ডব পেয়েছিলেন সখা রূপে। - প্রকৃত ভক্তের কোন জাতি ধর্ম বর্ণ বা ভাষা ভেদ নেই।


রামঠাকুরের বলা গল্প শুনি
সংকলক দীপক কুমার মুখোপাধ্যায় (রঞ্জু)
পৃষ্ঠা:৪৪


একদিন শ্রীসন্তোষ মোহন দত্তের(তিব্বত সপ ফেক্টরীর মালীক বনমালিপুর, আগরতলা) সহধর্মিনী ঠাকুর ঘরে উত্তরমুখী হয়ে পূজা করছিলেন। ঐ সময় তাঁর পেছনে দাঁড়িয়ে একজন বলল, "মা! গাঙ্গাইল রোডের নিকট আজ শ্রীশ্রী সত্যনারায়ণ পূজা হইব। আপনারা যাইবেন।" কিছুক্ষণ পরে ঐ পূজারিনী পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখেন- ফতোয়া গায়ে ৮০/৮৫ বত্সরের এক বৃদ্ধ লাগোয়া রাস্তা অতিক্রম করে আই. কে রায়ের বাড়ীতে প্রবেশ করলেন। পরে তিনি জানতে পারলেন যে আই.কে রায়ের স্ত্রী পারুল বালা রায়কেও শ্রীশ্রী সত্যনারায়ণ পূজার নিমন্ত্রণ করে ঐ বৃদ্ধ দ্রুত গতিতে অদৃশ্য হয়ে গেলেন। পরবর্তী সময়ে দু-গিন্নির মধ্যে ঐ বুড়ো নিয়ে আলাপ হল। তাঁরা কেহই ঐ বুড়োকে জানেন না। তাঁরা উপলব্ধি করল যে চাল-চলনে ও পোষাকে ঐ বুড়ো শ্রীশ্রী রামঠাকুর। তাঁরা আক্ষেপ করে বলেন, "আমরা শ্রীশ্রী রামঠাকুরকে পেয়েও হারালাম।"
শ্রীশ্রী রামঠাকুর তাঁর উত্সবাদির খবর জনগনকে জানিয়ে দেন। তিনি প্রয়োজনে আলো-ছায়ায় দেখা দেন। তিনি বলেন, "ভগবানের প্রচার ভগবান করেন।" বাস্তবে দেখা গেছে লৌকিক প্রচার মাধ্যমে শ্রীশ্রী রামঠাকুরের উত্সবাদির খবর ব্যর্থ হয়।



শ্রীশ্রী রামঠাকুরের অলৌকিক কার্যকলাপ।
প্রথম খণ্ড
পৃষ্ঠা: ১৫
শ্রী হরেকৃষ্ণ পাল, আগরতলা।


অহংকার মোচন

কৃষ্ণনগর(আগরতলা) নিবাসী শ্রীযুক্ত সুরেন্দ্র কুমার দেববর্মা মহাশয় প্রথম জীবনে বিলোনীয়ায় ত্রিপুরার রাজার নায়েব ছিলেন। কার্যোপলক্ষে তাঁকে বিলোনীয়ায় থাকতে হতো। ঐ সময় তিনি মাঝে মাঝে শ্রীযুক্ত ফনীন্দ্র মালাকার মহাশয়ের বাড়ীতে শ্রীশ্রী রামঠাকুরকে দেখতে যেতেন। একদিন শুনলেন যে শ্রীশ্রী রামঠাকুর শ্রীযুক্ত ফনীন্দ্র মালাকার মহাশয়ের বাড়ী হতে পাল্কী যোগে রেল স্টেশনে যাবেন। তিনি স্থির করলেন যে তিনি পাল্কীর পেছনের দিকে একা বহন করবেন। যেহেতু তিনি যুবক এবং শক্তিমান। আর সামনের দিকে দু'জন বহন করবে। এই সিদ্ধান্তই বাস্তবে কার্যকরী হল। যথাসময়ে পাল্কী চলতে আরম্ভ করল। শ্রীশ্রী রামঠাকুর একাই ঐ পাল্কীতে বসে আছেন। কিন্তু দেখা গেল যে পাল্কীর পেছনের দিক এত ভারী বোধ হল যেন তাঁর কোমর ভেঙ্গে যাবে। তিনি লজ্জায় বলতে সাহস পেলেন না। হঠাত তাঁর মনে হলো তাঁর শারীরিক শক্তির অহংকার ত্যাগ করে শ্রীশ্রী রামঠাকুরের কৃপা প্রার্থনা করা প্রয়োজন। পরে তাই করলেন। দেখা গেল যে পেছনের দিক শোলার মতো হালকা বোধ হল। ফলে আরামে রেল স্টেশনে পৌঁছে গেলেন।
শ্রীশ্রী রামঠাকুর তাঁর শরনাগতের অহংকার মোচন করেন। ভগবান প্রাপ্তিতে অহংকার বিরাট বাধা।


শ্রীশ্রী রামঠাকুরের অলৌকিক কার্যকলাপ।
প্রথম খণ্ড
পৃষ্ঠা: ২০
শ্রী হরেকৃষ্ণ পাল, আগরতলা।

সোমবার, ৩ আগস্ট, ২০১৫



দক্ষিনাকালীর পূজা ও নরনারায়ণ সেবা

কালীঘাটে শ্রীশ্রী ঠাকুরের মঙ্গলার্থে দক্ষিনা কালীকে পুজো দিতে আর দরিদ্র নর নারায়নদের প্রসাদ গ্রহণে নিমন্ত্রণ করতে সানন্দে আগ্রহী হলেন ডাঃ দাসগুপ্ত। গুরুর যে কোনও আদেশ দাসগুপ্তের শিরোধার্য। তার অতি ভাগ্য বলে গুরু তাকে স্নেহের আহ্বান করে সঠিক কাজে নিয়োজিত করেন। তাই দক্ষিনা কালীর পূজার আদেশে তিনি ধন্য হলেন। চললো ব্যবস্থাপনা।
দরিদ্র নর নারায়নদের প্রসাদ গ্রহনের সময় দাসগুপ্তকে সাবধান হতে নির্দেশ দিয়ে ঠাকুর বললেন-
"দেখিবেন তাহারা পরস্পর ঝগড়া-ঝাটি, অশ্লীল গালাগালি, কুত্সিত আচরণ করিতেছে। আপনি সেদিকে দেখিবেন না। আপনাদের দেখিয়া সঙ্গে সঙ্গে তাহারা চক্ষু বুজিয়া কেহ কালী-কালী, কেহ শিব-শিব, কেহবা হরি-হরি জপ করিতেছে। আপনি এগুলি দেইখ্যা রাগ করিবেন না। হাত জোড় কইরা পরের দিন সকলকে প্রসাদ গ্রহনের নিমন্ত্রণ কইরা আসবেন অতি শ্রদ্ধায়।''
পূজার নির্দিষ্ট দিনে পার্সে মাছ জোগাড় করা হল। ওই মাছে ভোগ তৈরী করে দক্ষিনা কালীর পূজা হলো কালীঘাটে। শুরু হল দরিদ্র নরনারায়নের সেবা। প্রচুর পরিমানে প্রসাদ পেয়ে সবাই হল তুষ্ট, আনন্দিত। দাসগুপ্ত তখন নাট মন্দিরে বসে সমাহিত চিত্তে গুরু প্রদত্ত নাম জপ করছিলেন। পূজা শেষ হতে একজন পাণ্ডা ছুটে এসে ধ্যান মগ্ন দাসগুপ্তকে টেনে আনলেন আশীর্বাদের জন্য। নিয়ে গেলেন মন্দিরের গর্ভগৃহে। দাসগুপ্ত সাষ্টাঙ্গে প্রনাম করে উঠে তাকালেন মায়ের মুখের দিকে। কিন্তু একী! কোথায় মা, এ যে ঠাকুরের মুন্ডমালিনী রূপ। মায়ের আসনে হাসিমুখে বসে আছেন শ্রীশ্রী ঠাকুর। গলায় তাঁর মুণ্ডমালা ও লাল জবার মালা। পায়ে লালফুলের সচন্দন ডালি। ঠাকুরের পাদপদ্মে সিঁদুরের লাল আভায় শ্রীপদ আলোকোজ্জ্বল। পর মুহূর্তেই আবার দেখতে পেলেন দক্ষিনাকালীর বিমোহিত রূপ। এ এক অদ্ভূত অবস্থা। প্রমান হয়ে গেল গুরু দেহই সর্ব দেব-দেবীর বিশ্রামাগার, লীলা নিকেতন। গুরুই শাশ্বত সনাতন পুরুষ।


মন্নাথঃ শ্রীজগন্নাথো, মদগুরুঃ শ্রীজগদগুরুঃ।
মমাত্মা সর্বভূতাত্মা তস্মৈ শ্রী গুরুবে নমঃ।।

রবিবার, ২ আগস্ট, ২০১৫



ঠাকুর ও ভিন্নভাসী ভক্ত

ইন্দুভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় লিখছেন - পুরী চক্রতীর্থে আছি। একদিন সকাল বেলা দুই জন মাদ্রাজি ব্রাহ্মন ডঃ প্রভাত চন্দ্র চক্রবর্তীর এক পত্র নিয়া উপস্থিত। পত্রখানা বাংলায় লেখা- ইহাতে লেখা- এই লোকদুটি ভারত ধর্ম মহামণ্ডলের প্রধান পুরোহিত। ইহাদের নিকট ধর্ম সম্বন্ধে কয়েকটি প্রশ্ন উপস্থিত হইয়াছে যাহার সমাধানের জন্য ইঁহাদিগকে ঠাকুরের নিকট পাঠাইতেছি। ইঁহারা ইংরাজি জানেন। তুমি প্রশ্নগুলি শুনিয়া ঠাকুরকে বলিয়া তাহার উত্তর ইঁহাদিগকে ইংরাজিতে বুঝাইয়া দিবে। ঠাকুর সংস্কৃতে বলিলে ইঁহাদের নিকট আমি অত্যন্ত খেলো হইব।
ঠাকুর একখানা তক্তপোষের উপর দক্ষিন দিকে মুখ করিয়া বসিয়াছিলেন। প্রভাতবাবুর পত্র শুনিয়া ঠাকুর বলিয়াছিলেন ভালো কথা, বাংলাই বলিতে পারি না সংস্কৃত বলবো কেমনে। আগন্ত্তকদ্বয় ঠাকুরের দিকে পিছন করিয়া উহাদের প্রশ্নগুলি আমাকে ইংরাজিতে বলিতে লাগিলেন। কিন্তু তাহার ভাব ঠিক রাখিয়া বাংলায় ঠাকুরকে বুঝাইয়া দেওয়া আমার বিদ্যায় কুলাইল না। ঠাকুর আমাকে বলিলেন- "ইহাদের জন্য একটা তরমুজ আনেন গিয়া।" আমিও রক্ষা পাইলাম। মিউনিসিপ্যাল মার্কেটে শ্রদ্ধেয় ভ্রাতা ভুবন মোহন মুখোপাধ্যায়ের বাসায় ঘন্টা খানেক কাটাইয়া একটি তরমুজ নিয়া আসিলাম। আমি দোতালায় উঠিয়া দেখি ঠাকুরের পায়ে দুই ব্রাহ্মন নমস্কার করিতেছেন, আর তাহাদের মাথায় হাত রাখিয়া ঠাকুর বলিতেছেন; "গোবিন্দ গোবিন্দ।" মাদ্রাজি ব্রাহ্মন দু'জন পিতামাতা ভিন্ন পায়ে পড়িয়া কাহাকেও নমস্কার করেন নাই। তাঁহাদের প্রশ্ন সমূহের উত্তর সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করিতে বলিলেন যে- যে সব প্রশ্ন উদয় হইয়াছিল সবগুলিরই অত্যন্ত সন্তোষজনক উত্তর পাইয়াছেন। এই সম্বন্ধে আরও যে সব প্রশ্ন উদয় হইতে পারে তাহারও মিমাংসা হইয়াছে।

 চিত্রপট নিয়ে ঠাকুরের বাণী

 বাংলাদেশের বিক্রমপুরের রাজবংশধর জগন্নাথ রায়কে ঠাকুর বলেছিলেন নিজেরই চিত্রপট দেখিয়ে-"কেন আইছেন কষ্ট কইরা। আমি ত আপনার ওইখানে আছিই।" চিত্রপট নিয়ে যতীশ চন্দ্র সরকার বলেছেন ঠাকুরের বাণী -"চিত্রপট কথা কয় কয়াইলে।" আবার ঠাকুর চিত্রপট বসানো নিয়ে বলেছেন-
*"ওই ত চিলা কোঠায় ফালাইয়া থইছেন। সারাদিন কারো মুখ দেখনের উপায় নাই।"
*"চিত্রপটের আবার গরম লাগবে কেন? ওটা ত কথা কয় না?"
*"চিত্রপটকে একটা নিমক দানিতে একটু চিনি ও ওষুধ খাওনের টাই গ্লাসে একটু জল দিলেই ত হইয়া গেল গুরু সেবা?"
*"হ রাখছেন না? খুব ভালো জায়গায় থইছেন যত্ন কইরা চিত্রপটরে? আলো বাতাস ডুকনের উপায় নাই। অন্ধকার একটা ছোট্ট কোঠায় মালখানায় চিত্রপট।"

প্রানের ঠাকুর সবার মাঝে তাঁর চিত্রপটের অধিষ্টান চান। যাতে সবাই তাঁকে চলাফেরায় সর্বত্র দেখতে পান আবার তিনিও সর্বদা আশ্রিতদের দিকে দৃষ্টি রাখতে পারেন। তাই ঠাকুরকে আলাদা মন্দির করে, বাড়ির চিলে কোঠায় উঠিয়ে রাখার কোনো যুক্তি নাই। তাই তিনি সর্বদাই আশ্রিতদের চোখের সামনেই থাকতে চান।

পরমেষ্ঠী গুরু শ্রীশ্রী রামঠাকুর
ডঃ প্রশান্ত কুমার ভট্টাচার্য
পৃষ্ঠা: ৪৯১

শনিবার, ১ আগস্ট, ২০১৫



Sri Sri Ram Thakur and Sarat Chandra Chattopadhyay

It was the year 1933 or about 72 years ago. The renowned litterateur Sarat Chandra Chattopadhyay came to the residence of late Dr. J.M. Dasgupta’s house at 87, Ballygunge Place. Dr. Dasgupta was then the Congress President of the undivided Bengal and Sarat Chandra, was then President of Howrah District Congress. They came to know each other through their Congress activities and later on this turned into close friendship between the two.
Whenever Sarat Chandra has become indisposed, he used to send for Dr. Dasgupta for medical treatment.
On the day in question when Dr. Dasgupta saw Sarat Chandra in his house, he told him “Dada, why did you come to my house. You could have easily spoken to me on the telephone”. Sarat Chandra replied that as he was physically all right, to get the friendship renewed, he had come to meet him.
Both of them were having a chat over tea. Sarat Chandra was admiring some photographs and oil paintings, fixed on the wall.
Sarat Chandra asked “Well, Dr. Dasgupta, I find that you have good collection of large number of portraits and whose Photos are these?”
With a little hesitation Dr. Dasgupta said “These are portraits of my Guruji Sri Sri Ram Thakur.
With a beaming face Dr. Dasgupta said, that Thakur had been gracious enough to initiate him with holy “Mantra”!
Sarat Chandra said, “I find that your heart and soul is full with the grace of Thakur."
“But I have not yet known at all” said Dr. Dasgupta.
In most humble tone, Dr Dasguppta said, “Thakur did not like any publicity. That is why people as yet did not hear of his name.
It was getting late at night. Sarat Chandra humbly asked “Brother, would you please fulfill a request of mine?”
“What is it?” asked Dr Dasgupta.
Sarat Chandra said, “Would you please telephone me when Thakur next comes to your house?”
“Certainly” was the reply of Dr. Dasgupta.
After a few months Sarat Chandra, seeing Dr. Dasgupta in his house said “Your Thakur must have come”.
“Yes, about an hour ago He had come”.
“Brother, please give me a couple of minutes. I shall get ready.”
Both of them came to Ram Niwas.
In the first floor Thakur was sited on a bed. He was clad in a dhoti, almost bare body, on His shoulder was the sacred thread and he had a garland of Tulsi beads.
About 10 persons were seated in front of Him.
Seeing Sarat Chandra the persons respectfully gave him enough room.
Dr. Dasgupta paid tributes to the literary acumen of Sarat Chandra and his patriotism.
Thakur was listening patiently, but His eyes were fixed on Sarat Chandra.When Dr. Dasgupta stopped talking, Thakur told Dr. Dasgupta “Please arrange for tea and smoking for this Vaishnava”.
Sarat Chandra never heard such eulogy about him. He was overwhelmed.
Thakur said, “In this house, tea is available in plenty, but not smoking arrangements. So please send someone to Gariahat Road to bring Hookah-Kalki-tobacco”. Sarat Chandra was sitting in the Verandah. He said that it was not necessary to bring smoking arrangements from outside. Saying this, he brought out his smoking pipe and after filling up with tobacco, he lighted the same.
After tea, Sarat Chandra sat down to listen preachings Thakur was giving. When it was getting late Sarat Chandra left for his house. In the evening Sarat Chandra had come back again.
Then ensued the following conversation:
Dasgupta said, “Sarat Da, I see that you have been charmed by Thakur. So you have come back again.”
Sarat Chandra replied “Thakur is unknowable, but attractive. That is why I have come back again.”
After a little while Sarat Chandra said, “You are now very busy, there are also many devotees in the house. But I would like to hear more about Thakur”. Dr. Dasgupta said, “You are likely to be in this house for some time more. Let us see if Thakur comes here again.”
After about 15 minutes Dr. Probhat Chandra Chakraborty, Head of the Dept. of Sanskrit of Calcutta University came.
After preliminary introductions, Dr. Dasgupta took them to a side-room and requested them to have hearty discussion on Sri Sri Thakur.
That day Sarat Chandra returned home rather late at night. From next day onwards Sarat Chandra used to come for darshan of Sri Sri Thakur, sometimes in the morning, afternoon or evening.
On one occasion Dr. Dasgupta was requesting ladies and gentlemen who were present, to take Prasad, but no such request was made to Sarat Chandra. Aggrieved, Sarat Chandra said “Why are you not asking me to take Prasad”, Dasgupta replied— “Today, the Prasad is such as not likely to do good to your stomach”. Suddenly Thakur Himself appeared and said “Why should not the Vaishnava Thakur take Prasad tonight. If Prasad does any harm to him, then Dasgupta would be available to give medicines.”
At the time of going back, Sarat Chandra said, “Thakur the Prasad was excellent. So I have had a very good meal. Please do not worry about me. You can rest assured that next day I will be able to come.”
The next day he came. Sri Sri Thakur left soon thereafter.
After a few days, Sarat Chandra met Dr. Dasgupta and asked him “May I know what is your impression about Thakur?”
Came the reply— “In Thakur’s presence I felt that I am in a world of contentment— as if I have nothing more to seek for! But when I am away from Him, I feel as if I am living in a world where I have lost everything! That is why I would like to meet Him and seek His blessing!”

— Ramdas.


শ্রীশ্রী ঠাকুরের হাস্যরস

 শ্রীশ্রী ঠাকুর রসিক ছিলেন আবার কখনো বজ্র কঠিন ছিলেন। ফনীন্দ্র মালাকারও মাঝে মাঝে ঠাকুরের সাথে রসালাপ করতেন। প্রথম রসের ঘটনা ঠাকুরের বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে। ঠাকুর তখন শ্রীগুরু অনঙ্গ দেবের সাথে হিমালয় পরিভ্রমন সেরে ফিরে এসেছেন। আত্মীয়পরিজনরা ঠাকুরকে গৃহে বেঁধে রাখার জন্য গার্হস্থ্য জীবনে প্রবেশের চেষ্টায় বিয়ের ব্যবস্থা করতে উদগ্রীব হলেন।চারদিকে পাত্রী দেখা শুরু হল। রামঠাকুরকে অভিভাবকরা অনেক পাত্রীর সন্ধান দিলেন কিন্তু তিনি বিয়ে করতে রাজি নন। এর থেকে উত্তরণের জন্যই বোধ হয় ঠাকুর বললেন- পাত্রী পাওয়া গেছে। নিজেই জাঁকিয়ে বসলেন ভ্রাতুষ্পুত্রদের নিয়ে। তারপর অনেকক্ষণ পাত্রীর বর্ণনা, পাত্রীর পিতার বর্ণনা, কী করে বিয়ে হবে, কোলকাতা শহরে কী করে যাওয়া হবে এসব বলে যেন বেশ রোমাঞ্চ অনুভব করলেন। ভাইদের ছেলেমেয়েরাও আনন্দে অস্থির বিয়েতে যাওয়ার আনন্দে। সবাই আনন্দের ঘোরে রাতের নিদ্রায় শায়িত। কিন্তু একী সুখ স্বপ্নে অস্থির। পরদিন সকালে গৃহেতে আর শ্রীশ্রী ঠাকুরকে খুঁজে পাওয়া গেল না। এ এক অদ্ভূত করুন রস যা অত্যন্ত হৃদয় বিদারক। কিন্তু এটিই ছিল ঠাকুরের সংসার জীবন থেকে চিরমুক্তির রসোত্তীর্ণ ঘটনা।
ঠাকুরকে নিয়ে অনেক সময় রসিকতা করতেন ফনীন্দ্র মালাকার। একদিন অসময়ে ঠাকুরকে এসে ফনী ভাই জিগ্যেস করলেন- ঠাকুর আমলকী খাবা? তুমি ত আবার বন জঙ্গলের ফল মূল খাইতে ভালবাস।
ঠাকুর বললেন -যাও যাও লইয়া আস। আনলেই খামু।
যাই হোক ঠাকুর বলেছেন- আমলকী খাবেন। মালাকার বিলোনিয়ার পরিচিত পাহাড়ি জায়গায় বহু ঘোরাঘুরি করেও আমলকী পেলেন না। বিফল মনোরথ হয়ে বাড়ি ফিরে এসেছেন দেখেই ঠাকুর বলেছেন কী হইল আমলকী দেও? আনছনা আমলকী।
ফনীভাই বললেন- তুমি জান এখন আমলকীর সময় না। আমারে আগেই কইলে পারতা। তুমি পেটের ভিতরে সব কথা রাইখ্যা দাও। বরং একটা মা থাকলে সব জাইনা নিতাম।
ঠাকুর বললেন - একটা মা জোগার কইরা আন না।
ফনীভাই- তোমার বয়স আশি পার হইছে। তোমারে এখন মা দিব কেডা? এই জন্মে আর মা পাইতাম না।
ঠাকুর- একটা মা ত পাইতা। মাটা তৈরী হইছিল। আগে কইলে নিয়া আইতাম। রাজ পুতানায় থাকতে সেনি পরিবারের একমাত্র মেয়েরে আমারে দিতে চাইছিল। তোমার সাথে দেখা হইব তখন কি আর জানতাম আর তোমার যে মা লাগব এও কি জানতাম? আর কোটিপতি মা হইত, তোমার কোনো অসুবিধা হইত না। তবে অখন আর হইত না। কারণ আর সেই সুবিধা নাই।
যোগেশ্বর কর্মকার ঠাকুরের সাথে সাথে বহু জায়গায় যেতেন আর কীর্তনের সময় খোল বাজাতেন তাতে অন্যরা তাকে শ্রদ্ধা ভক্তি করত শুধু নয়, ঠাকুরও তাকে এটা সেটা দিতেন। কিন্তু ঠাকুরের প্রতি কোনো গভীর বিশ্বাস তার ছিল না। যেতেন কিছু পাওয়ার লোভে। একবার চট্টগ্রামের ফিরিঙ্গি বাজারে ঠাকুর আছেন বিধুভূষণ বোসের বাড়িতে। রাতে অনেক শিষ্যরা বসে আছেন। যোগেশ্বর বাবু সেখানে গিয়ে হাজির। ঠাকুর যেখানে বসেছিলেন সেখানে গিয়ে ঠাকুরের দু-পা জড়িয়ে ধরে এনে নিজের কপালে ঠেকালেন।
ঠাকুর বললেন - আহা ভক্তি দেখাইয়া এত নমস্কার করতাছেন। এদিকে ত মনে মনে আমারে লইয়া অকুল সাগরে ভাইস্যা বেড়াইতেছেন।
অন্যান্য আশ্রিত ও ভক্তরাও একথা শুনে আশ্চর্য হয়ে গেল। ঠাকুর এসব কী বলছেন! ঠাকুরের মুখের দিকে আবার তিনি তাকালেন। ঠাকুর আবার বললেন- মূর্খরা টাকা বাজাইয়া লয়না। নাইলে ধরা পড়লে পুলিশে যাইব এই ডরে চালাকরা টাকা বাজাইয়া লয়। বলতে বলতেই ঠাকুর হেসে উঠলেন। তারপর বললেন- নেন নেন আর বাজান লাগত না। আর মনের সাথে যুদ্ধ করতে হইব না। ঠাকুরকে প্রনাম করে যোগেশ্বর কর্মকার ফিরে এলেন।



পরমেষ্ঠী গুরু শ্রীশ্রী রামঠাকুর
ডঃ প্রশান্ত কুমার ভট্টাচার্য
পৃষ্ঠা: ৪৪৪